যথাযথ মর্যাদা ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ইতালিতে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩-তম বার্ষিকী উদযাপন


সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

যথাযথ মর্যাদা ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ইতালিতে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩-তম বার্ষিকী উদযাপন

বাংলাদেশ দূতাবাস, রোম যথাযথ মর্যাদার সাথে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩-তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। এই বিশেষ দিনে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগে ছিল সকাল ৯.০০ ঘটিকায় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির উপস্থিতিতে দূতাবাস প্রাঙ্গণে মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীতের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিকগণ ও প্রবাসী বাংলাদেশী নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগের আয়োজনে ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ, জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন, দিবসটি উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত বিশেষ বাণীসমূহ পাঠ, রাষ্ট্রদূত কর্তৃক স্বাগত বক্তব্য প্রদান, আলোচকদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা এবং দোয়া ও মোনাজাত।

দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রবাসী বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। আলোচনায় বক্তারা জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেন। তারা প্রত্যেকেই জাতির পিতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রদূত মোঃ মনিরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি ১৯৭১ সালের এইদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। তিনি আরো বলেন যে, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার সাথে এবং নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। এসময় জনাব ইসলাম সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের দিকে আলোকপাত করে উল্লেখ করেন যে, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রাষ্ট্রদূত ইতালিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপের বিষয় উল্লেখ করে আশা প্রকাশ করেন যে অচিরেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা এর সুফল পেতে শুরু করবেন এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ইতালিতে উজ্জ্বল হবে। সকলকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ায় অবদান রাখার জন্য আহবান জানান। বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের পরে দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান মোঃ জসীম উদ্দিন উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

একই দিন সন্ধ্যায়, স্বাধীনতার ৫৩-তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস, রোম ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে রোমের প্রাণ কেন্দ্রে Roma Cavalieri, A Waldorf Astoria Hotel – নামক এক পাঁচ তারকা হোটেলের Belle Arti হলে কূটনৈতিক অভ্যর্থনার (diplomatic reception) আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ইতালি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিনিস্টার প্লেনিপটেনশিয়ারি মিজ আলেসান্দ্রা স্কিয়াভো প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে ইতালিয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাগণ, রোমে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থাসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিবৃন্দ ও কূটনীতিকগণ, বিদেশী সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, গবেষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ইতালিতে বিভিন্ন জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থায় কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের এ মাহেন্দ্রক্ষণে আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে সেদিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাষ্ট্রদূত সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও সাফল্যসমূহ তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মত বৈশ্বিক অভীষ্টসমূহের বিষয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় অবস্থান উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরিত হবে। বাংলাদেশ ও ইতালির বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জনাব ইসলাম দু’দেশের বহুমাত্রিক সহযোগিতা আরো জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এরপর, রাষ্ট্রদূত বিশিষ্ট অতিথিদের নিয়ে জাতীয় দিবসের কেক কাটেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের এদেশীয় স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বৈশ্বিক অর্জন তুলে ধরে নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। হলরুমে বাংলাদেশী শিল্প, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি তুলে ধরে এমন পণ্য, ছবি, বইসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ‘বাংলাদেশ কর্ণার’ স্থাপন করা হয় যা উপস্থিত বিদেশীদের বিশেষ আকর্ষণে পরিণত হয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *