ভুয়া খবর রোধে গণমাধ্যমকর্মীদের সংলাপ


বাংলাদেশে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজবসংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিস (সিজিএস) তাদের ‘কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ধারাবাহিক সংলাপের তৃতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সংলাপে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ফ্যাক্ট-চেকার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা অংশ নেন।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে দেশে সাংবাদিকতার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়গুলো উঠে আসে এবং এর ফলে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মিথ্যা খবর ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার দিকটিও আলোচনা করা হয়। আলোচিত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে তথ্য সংগ্রহে বাধা দেওয়া বা তথ্য না দেওয়া, সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও ভুল তথ্য দেওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়, প্রতিবেদকদের নিয়মিত কাজের চাপ ও তার ফলে মানসম্পন্ন সংবাদের ঘাটতি, পর্যাপ্ত রিসোর্সের অভাব, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মিডিয়া হাউস ও তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন ইত্যাদি। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমে নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের সঙ্গে সমন্বয় ও কীভাবে তথ্য যাচাই করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়।

সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিজিটালি রাইট-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী ও এজেন্সি ফ্রান্স প্রেসের (এএফপি) ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র অ্যাম্বাসির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ইব্রাহিম মল্লিক প্রমুখ।

সংলাপে আসিফ বিন আলী বলেন, ‘কোভিড-১৯ চলাকালে দেশে ধর্মীয় নেতারা বিভিন্ন ধরনের ভুল তথ্য ও গুজব ছড়িয়েছেন, যা জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকতা হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজের একটি অন্যতম অংশ। সমাজে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তবে সাংবাদিকতাও সেখানে সঠিকভাবে পরিচালিত হয় না।’

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী অতীত ও বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতার তুলনা করে বলেন, ‘১০ বছর আগে তথ্য পাওয়ার উৎস আর এখনকার উৎস সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখন যে কোনো সংবাদ অনেকগুলো ধাপে পর্যালোচনা করে প্রচার করা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটি দেখা যায় না। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগোরিদমের ফলে যে যেই মতবাদে বিশ্বাসী, তার কাছে কেবল ওই তথ্যগুলোই পৌঁছায়।’

গুজব প্রতিরোধে ডিসিদের দিকনির্দেশনা তথ্যমন্ত্রীর কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রী পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ভুল তথ্য প্রচার করা হলে রিপোর্টারদের উচিত সে খবরের সত্যিটাও প্রচার করা অথবা একেবারেই সেই সংবাদ বা তথ্য প্রচার না করা। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।’

সংলাপের শেষ পর্বে গণমাধ্যমকর্মীরা একটি জরিপে অংশ নেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংবাদমাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য উপস্থাপন রোধে বিভিন্ন উপায় তুলে ধরেন।

সিজিএসের ‘কনফ্রন্টিং মিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ধারাবাহিক কার্যক্রমটি ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে আয়োজিত হবে এবং সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *