আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুলনা হতে পারে না
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না। তারা মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। গতকাল শনিবার কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সাদুল্যাপুরের তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা (বিএনপি) নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, নিয়ম মানে না, আইন মানে না; সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে কীভাবে। কেউ কেউ বলেন বড় দুই দল; যারা এটা বলেন, তারা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা যে দলগুলো আছে, জামায়াত, এরা কারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল, সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গল ও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।
২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৩০টি পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল। তারা পেয়েছিল বাকি সব আসন। তাহলে এ দুই দল একপর্যায়ের হয় কীভাবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা নিজেদের গঠনতন্ত্রও মানে না। তাদের গঠনতন্ত্রেই আছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নন, খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে (তারেক রহমান) দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে: শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুর্নীতি করে নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসিনি। জনগণের জন্য কাজ করে তাদের ভাগ্য গড়তে এসেছি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
পদ্মা সেতু করেছি বলেই দ্রুত আসতে পারছি: প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে ঢাকা থেকে স্টিমারে বা লঞ্চে গোপালগঞ্জ টুঙ্গীপাড়া আসতে ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি। কোটালীপাড়াবাসীকে আগে শুধু পানি, খাল-বিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি তাতে সফল হয়নি। সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি, জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই যখন কেউ মিথ্যা অপবাদ দেয়, সে অপবাদ নিতে আমি রাজি না এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এই অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু তারা সেটা সফল হয়নি, দিতে পারেনি।
কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সব সময় আমার পাশে থাকেন বলে আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ করতে পারি। সুসময়-দুঃসময়ে সব সময় আমি কাছে পাই। এটাই আমার সব থেকে বড় শক্তি।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আয়নাল হোসেনের সঞ্চালনায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে গণভবন থেকে সড়কপথে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে কোটালীপাড়ায় পৌঁছান তিনি। সভাস্থল থেকেই তিনি গোপালগঞ্জবাসীর জন্য ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
জনসভা শেষে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতিহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিকেলে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।