জাতীয় দলে গ্রুপিংয়ে ভীত পাপন
সব বিষয়ে খোলামেলা কথাবার্তার জন্য সুখ্যাতি আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের। তবু ক্রিকবাজের আতিফ আজম-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি ব্যতিক্রম। এখানে শুধু চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ফিরে আসা এবং সিনিয়রদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেই খান্ত হননি বোর্ড প্রেসিডেন্ট, উপরন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরও কিছু জ্বলন্ত ইস্যু নিয়েও মত প্রকাশ করেছেন। কালবেলা পাঠকদের জন্য সংক্ষিপ্ত আকারে সেই সাক্ষাৎকারটি অনূদিত হলো…
এখনকার সময়ে ‘বিদায়ী সিরিজ’ কি সম্ভব?
পাপন : তিনটা সংস্করণের কারণে এখন সত্যিই এটা কঠিন হয়ে গেছে। কীভাবে তিনটা আলাদা সময়ে ভিন্ন তিন সংস্করণে ক্রিকেটারকে বিদায় দেওয়া সম্ভব। আমি একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, মাহমুদউল্লাহ যদি টেস্ট কখন ছাড়বে সে কথা আমাদের জানাত, তাহলে আমরা ম্যাচের আগে বিদায়ী আয়োজন করতে পারতাম। যদি সে টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেট ছাড়ার কথা জানায়, তাহলে হয়তো মালিঙ্গা কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের অবসরের আনুষ্ঠানিকতার মতো কিছু একটা আয়োজন আমরা করতে পারি। কিন্তু ক্রিকেটাররা যদি না চায়…আমি তাদের ওপরই এটা ছাড়তে চাই। কিন্তু বার্তা হলো, আমরা তাদের আনুষ্ঠানিক বিদায় দিতে প্রস্তুত।
হাথুরুর কোচিংয়ের সময় সিনিয়রদের সঙ্গে অনেক ঝামেলা হয়েছিল। এবারও কী সিনিয়রদের সামলানো তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে?
পাপন : হাথুরুসিংহের ভেতর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিক আছে। সে যখন কাউকে কিছু একটা বলার সিদ্ধান্ত নেয়, বলে ফেলে। এমনকি আমিও জানতে পারি না। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। নিদাহাস ট্রফির সময় মাশরাফী মোর্ত্তজাকে হঠাৎ এমন একটা কথা বলেছিল, যাতে সে হতাশ হয়েছিল। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আমি তাকে বললাম কী হয়েছে? সে বলল, বিশ্বকাপের সময় কয়েকটা ম্যাচে হাথুরু তাকে বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। মাশরাফী তখন দলের অধিনায়ক, তাই হাথুরু এটা নিয়ে তাকে ভাবতে এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেছিল। আসলে আমাদের ক্রিকেটাররা এ ধরনের কথাবার্তায় অভ্যস্ত না। সেই সময় আমি হাথুরুকে এ ধরনের কথা বলতে নিষেধও করেছিলাম। এটাও বলেছিলাম, অন্তত সিনিয়রদের কিছু বলার আগে যেন আমাকে জানানো হয়। হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর আমরা শ্রীলঙ্কা এবং আরও কয়েকটা দলের কাছে অনেক ম্যাচ হেরেছিলাম। এরপর মোর্ত্তজা একদিন আমাকে হাথুরুকে ফিরিয়ে আনার কথা বলে। এ ছাড়া তামিম ইকবালের সঙ্গেও হাথুরুর সমস্যার কথা শুনেছি; তবে এটা নিয়ে দুজনের কেউ আমাকে কিছু বলেনি। কিন্তু এবার তামিমও তাকে ফেরাতে বলেছে। আমি যেসব ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই হাথুরুকে ফেরাতে বলেছে।
হাথুরু শততম টেস্টে মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে মুশফিকেরও নাকি দূরত্ব তৈরি হয়েছিল…
পাপন : অন্যদের মতোই সে বাদ পড়েছিল। যেমন বাদ পড়ে মুমিনুল। তা ছাড়া সে সময় মুশফিকের চেয়ে ভালো উইকেটকিপার তার হাতে ছিল। সেরাকে সে অগ্রাধিকার দেবে, সেটাই স্বভাবিক। উচিতও। কোচ হিসেবে সে ওভাবেই চিন্ত করে। যদিও আমাদের ভাবনা ফিল্ডিংয়ের সময় সেরা উইকেটকিপারের কী দরকার, যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় সেরাকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় যে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাটার।
হাথুরু দলের সিনিয়রদের ম্যানেজ করতে পারবে?
পাপন: আমার মনে হয় খুব কঠিন হবে। এমনকি রাসেল ডমিঙ্গোরও সিনিয়রদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছিল। একটা পর্যায়ে তো সেই আশাই ছেড়ে দেয়। কেউ আশা ছেড়ে দিলে সেটা আমাদের উপকারেও লাগেনি। যদি একজন কোচ কিছুই না বলতে চায়…যদি যার যা ইচ্ছা করুক—ব্যাপারটা এভাবে ছেড়ে দেয়, তাকে পদে রেখে দেওয়ার মানে হয় না। কোচ পরিবর্তনটা দরকার হয়ে পড়েছিল। এবার আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি। কারণ, জানতাম প্রথম পর্বের মতো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিনিয়রদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আরও কঠিন হবে। আমাদের ক্রিকেটারদের নিয়ে সমস্যা হলো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুই তারা আমাদের জানাতে চায় না। হাথুরুর জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে। কারণ, একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত সিনিয়ররা যদি ভালো খেলতে না পারে, হাথুরু তাদের দলে রাখবে না।
দলে গ্রুপিং নিয়ে…
পাপন : বাংলাদেশ ক্রিকেটের এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্রুপিং এবং এটাই বাস্তবতা। আমার আর কিছুতে সমস্যা নেই। আমি শুধু এই গ্রুপিং সম্পর্কে ভীত। আমি সাম্প্রতিক সময়ে এটি জানতে পেরেছি। বিশ্বকাপেও ওদের হোটেলে না থাকার পরও যা দেখেছি শুনেছি… বিশ্বাস করতে পারছি না এটা কীভাবে সম্ভব। সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে হলে আমাদের এর অবসান ঘটাতে হবে। কারণ একটা জিনিস সবারই বোঝা দরকার, তা হলো গ্রুপিং করার সুযোগ নেই। তাদের (সাকিব ও তামিম) মাঠে এবং ড্রেসিংরুমেও কথা বলতে হয়। ড্রেসিংরুমের পরিবেশও খারাপ ছিল, তবে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এই সিরিজ থেকে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজ) আমি অন্তত ড্রেসিংরুমে এটি (তাদের সম্পর্ক) পরিবর্তন করতে চাই। তারা বাইরে যা করে তা আমার জন্য চিন্তার বিষয় নয়।