১৭৯ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৪
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপসহ পণ্যবাহী দ্রুতগতির যানবাহন ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ চালকদের বেপরোয়া গতিতে পণ্যবাহী যানবাহন চালানো এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে তারা নিজেরা দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যান্য যানবাহনকে আক্রান্ত করছে। গণপরিবহন সহজ, সাশ্রয়ী ও উন্নত এবং যানজট কমিয়ে মোটরসাইকেল নিরুত্সাহিত করা অতি জরুরি বলে জানিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন’। গতকাল বুধবার মার্চ মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশকালে সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন।
সংগঠনটির প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, চলতি বছর গত মার্চ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৬ টি। এর মধ্যে নিহত ৫৬৪ জন এবং আহত ১ হাজার ৯৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৮৮, শিশু ৭৩। ১৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকটনিক গণমাধ্যমের তথ্যের সমন্বয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এই অবস্থার উন্নয়নে টেকসই গণপরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছে ৮১ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই সময়ে ছয়টি নৌ-দুর্ঘটনায় আট জন নিহত হয়েছে। ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং চার জন আহত হয়েছে।তুলনা করে বলা হয়েছে—ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৪৮৭ জন, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিল ১৭ দশমিক ৩৯ জন। মার্চে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছে ১৮ দশমিক ১৯ জন। এই হিসেবে মার্চ মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৬৬ জন, অর্থাৎ ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সকালে ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, দুপুরে ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ, বিকালে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং রাতে ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, প্রাণহানি ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; গাড়ির বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি অন্যতম।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলে—দক্ষ চালক তৈরি, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করা কিংবা আলাদা রাস্তা তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।