ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪

যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলের হামলায় ৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত


প্রতি ১০ মিনিটে একটি বোমা পড়ছে

গাজা
ছবি: সংগৃহীত

হামাসের সঙ্গে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান সব দিক থেকেই সম্প্রসারণ করেছে। সোমবারও টানা চতুর্থ দিনের মতো ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএএফ)।

এতে তিন দিনে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এরই মধ্যে সোমবার সকালে আরও ২০টি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়ে আইডিএএফ সামাজিক মাধ্যমে বার্তা দিয়েছে। গাজার উত্তরের অভিযান শেষ করে তারা এখন ক্রমেই দক্ষিণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসির। 

হামাসের সঙ্গে শুক্রবার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় শেষ হওয়ার পর গাজায় স্থল অভিযান বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। এর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, গাজাজুড়েই হামাসের শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করে আইডিএফ অভিযান জোরদার করেছে। ইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল গাজায় প্রায় ১০ হাজার বিমান হামলা চালিয়েছে। 

ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি জানিয়েছেন, অভিযান শুরুর পর আইডিএএফ ৮০০ উঁচু স্থাপনা নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বেসামরিক এলাকাতে নির্মিত অনেক টানেল ও রাস্তাও ধ্বংস করা হয়েছে। এ দিকে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার বলেছেন, দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের সম্ভাব্য অভিযান নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। 

তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায় থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হচ্ছে, উত্তরে যা ঘটানো হয়েছে, দক্ষিণে কোনোভাবে সেটা ঘটতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, প্রতি ১০ মিনিটেই একটি করে বোমা ফেলা হচ্ছে। এখানে হাসপাতাল, আশ্রয় শিবির বা অন্য কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। আমিও কোথাও নিরাপদ বোধ করছি না। কেউই এখনো নিরাপদ বোধ করেন না। এদিকে আইডিএফ সোমবার জানিয়েছে গাজায় ২০০ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

শনিবার থেকে ইসরাইলি বাহিনীর এ হামলায় ৮শর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৫,৫২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল কুদরা বলেন, এ হামলায় ৪১,৩১৬ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

এদিকে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে হাসপাতালে মরদেহ আসতে শুরু করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুর্স আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘মরদেহের প্রবাহে আমাদের হাসপাতগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। আমাদের হাসপাতালগুলো আহতদের আর কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। ইসরাইলের সেনারা আমাদের সব চিকিৎসা সরঞ্জাম ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, বিদ্যুতের অভাবে আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যাবে।

মহাপরিচালক আরও জানিয়েছেন, ইসরাইলিদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন, যার মধ্যে মাত্র ৪০০ জন দক্ষিণ দিকের রাফাহ অঞ্চলে পৌঁছাতে পেরেছেন। 

‘কৌশলগত পরাজয়’ ঘটতে পারে ইসরাইলের : গাজা উপত্যকায় চলমান অভিযানে যদি শিশু-নারী ও বেসামরিক লোকজনের হতাহত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে যুদ্ধে হামাসের বিরুদ্ধে জয় পেলেও কৌশলগতভাবে ইসরাইল পরাজিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।

রোববার ক্যালিফোর্নিয়ার সিমি ভ্যালিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক অনুষ্ঠানে অস্টিন বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে তাতে বর্তমানে সেখানে গুরুত্বের একদম কেন্দ্রে অবস্থান করছে উপত্যকার সাধারণ বেসামরিক লোকজন। ইসরাইলের অভিযানের কারণে হামাসের ওপর যদি তাদের নতুন করে আস্থা বাড়তে শুরু করে সেক্ষেত্রে হামাসের বিরুদ্ধে জয়ী হলেও কৌশলগতভাবে পরাজিত হবে ইসরাইলি বাহিনী।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *