“ভারতীয় উপমহাদেশ” ও বাংলা
এম, এ হক
আমরা বাংলাদেশীরা “ভারতীয় উপমহাদেশ”-এর অংশ না। দিল্লী কেন্দ্রিক যে সাম্রাজ্য ছিল, সেটা আগে শাসন করতো রাজপুত ডাইনেস্টি, এরপর দিল্লী সুলতানাত, এরপর মুঘল সাম্রাজ্য (মাঝে কিছুদিন শের শাহ), শেষ দিকে মারাঠীরা, এরপরে ব্রিটিশরা। আমাদের বাংলা সেই রাজা শশাঙ্ক-এর পর থেকে (৭ম শতাব্দী) পাল, সেন, পরে মুসলিম দ্বারা পরিচালিত ছিল। বারবার আমরা দিল্লীর শাসন থেকে নিজেদের স্বাধীন রাখার চেষ্টা করেছি। কেউ বাংলাকে “ভারত” বলতো না। বাংলা বাংলা-ই ছিল। বাংলাকে ভারতের মধ্যে ঢোকানোর কাজটা করেছে ব্রিটিশরা তাদের শাসনের সুবিধার্থে।
মহাভারতে যেসব এলাকার কথা বলা হয়েছে যেমন “কুরুক্ষেত্র” পাঞ্জাবের কাছে হরিয়ানাতে। “তক্ষশীলা” পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। বৃন্দাবন, গোকুল, কাশ্মীর এসব উত্তর প্রদেশে।
বিভিন্নভাবে খুঁজে “মহাভারত”- এর কোনো লোকেশনে বাংলাদেশের কোনও জায়গা অন্তর্ভুক্ত ছিল, এমন কিছুই খুঁজে পেলাম না। যদি বহু আগে ভারতীয় সাম্রাজ্যের প্রান্তে আমরা দখলকৃত থাকিও, কিন্তু বারবারই আমাদের অঞ্চল স্বাধীন হতে চেয়েছে। ভারতের সাম্রাজ্যের অধীন হতে চায় নি।
বাংলাকে ভারতের অংশ ভাবা মানে বাংলার ইতিহাসকে অশ্রদ্ধা করা। বাংলার মানুষের স্বাধীন হইতে চাইবার হাজার বছরের ইচ্ছেকে অসম্মান করা। আমাদের অর্ধেকটা বাংলা ভারতের মধ্যে ঢুকে গেছে কিছুই করার নেই, সেটা হয়তো আর রিকভারও হবে না। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ ভারত থেকে সবসময়েই স্বাধীন থাকতে চেয়েছে, আমরা স্বাধীন থাকবোই।
আমাদের সবার “দক্ষিণ এশিয়া” কথাটা ব্যবহার করা শুরু করা উচিৎ, এটাই একসেপ্টেবল উপায় আমাদের দেশের উপমহাদেশকে ডিসক্রাইব করার জন্য। নিজেদের “ভারতীয় উপমহাদেশ”-এর অংশ বলা বা মনে করা মানে নিজের অজান্তে ভারত ও বাংলার ডিফারেন্সটাকে মুছে ভারতের আধিপত্যকে মেনে নেওয়া। তারা আমাদের প্রতিবেশী সাম্রাজ্য, কিন্তু তারা আর আমরা আলাদা।
নিজেদের সম্মান রক্ষার জন্য এই অনুভূতি গ্রো করা অনেক জরুরী।