ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪

বাড়ছে কাজুবাদামের ফলন, রপ্তানিতে ব্যাপক সম্ভাবনা


রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার কৃষক দয়া লেন্দু চাকমার পাহাড়ের এই জমিটা আগে পতিত ছিল। তেমন কোনো কিছু এখানে চাষাবাদ করতেন না। কিন্তু আশেপাশে অনেক কৃষকের কাজুবাদাম চাষে সাফল্য দেখে এখন সেই জমিতে তিনি কাজুবাদাম চাষ করেছেন। সম্প্রতি তার গাছে ফুল এসেছে। আর সেই ফুলের সঙ্গে তার স্বপ্নগুলো ডানা মিলছে বেশ দামি এই অপ্রচলিত কৃষিপণ্যটি ঘিরে।

শুধু দয়া লেন্দু চাকমাই নন, তার মতো অনেক কৃষকই এখন কাজুবাদাম চাষে এগিয়ে এসেছেন। তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছাড়িতে দিনদিন কাজুবাদামের ফলন বাড়ছে। সম্প্রতি বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি ঘুরে কাজুবাদাম চাষের এ দৃশ্য দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশে ও বিদেশে কাজুবাদামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক বছরে দেশে বেশ কয়েকটি কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে এ খাতে একদিকে যেমন নতুন উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে তেমনি নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাদ এবং প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তোলা গেলে রপ্তানি আয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে কাজুবাদামের।

  • বাড়ছে ফলন

বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার অনেক পাহাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনদিন এই অপ্রচলিত কৃষি পণ্যটির ফলন বাড়ছে। যেসব পাহাড়ি এলাকায় আগে চাষাবাদ হতো না, কিংবা অন্য ফসল হতো, সেখানেও এখন কাজুবাদাম চাষ হচ্ছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদা। কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ, সেই সঙ্গে ঔষধি গুণাগুণ থাকায় বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে যেখানে ৯৬২ টন কাজুবাদাম উৎপাদন হয়, সেখানে ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪২ টনে। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ফলন বেড়েছে ৮৮০ টন। যা শতাংশের হিসেবে ৯১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে মূলত বান্দরবানে সবচেয়ে বেশি কাজুবাদামের ফলন হয়। এরপর রয়েছে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি। কাজুবাদাম চাষের জন্য যে রকম মাটি, তাপমাত্রা ও বৃষ্টি দরকার, তার সম্পূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই পাহাড়ি এলাকায়। দেশের অন্যান্য পাহাড়ি এলাকার মাটিও কাজুবাদাম চাষের অনুকূলে। বর্তমানে বিশ্বে ৩৫ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। এরমধ্যে আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রায় ১২ লাখ টন, ভারতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, ভিয়েতমানে ৪ লাখ টনের মতো কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন মাত্র ২ হাজার টনের কাছাকাছি। 

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার কৃষক দয়া লেন্দু চাকমা গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, অন্যান্য ফলের তুলনায় কাজুবাদামের দাম অনেক বেশি। তাই তিনি তার পতিত জমিতে কাজুবাদাম চাষ করেছেন। ভালো দাম পেলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণে জমিতে কাজুবাদাম চাষ করবেন বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে কাজুবাদাম ও কফির চাষের সম্প্রসারণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২১১ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।  এই প্রকল্পের পরিচালক শহীদুল  ইসলাম জানান, দেশে কাজুবাদামের বাজার বাড়ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় কাজুবাদাম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০২০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় কাজুবাদাম চাষ হতো ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে,  এখন হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

এ খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দেশে ও বিদেশে কাজুবাদামের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১৬ সালে দেশে প্রথম প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা হয়। গত কয়েক বছরে আরো কয়েকটি কাজুবাদাম প্রকিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াজাত কাজুবাদামের শুল্কায়ন মূল্য এখনো অনেক কম। ভিয়েতনামের মতো শূন্য শুল্কে কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির সুযোগ দেওয়া উচিত।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাজুবাদামের বিশাল চাহিদা রয়েছে, দামও অনেক বেশি। সেজন্য, কাজুবাদামের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাত বাড়াতে সরকার কাজ করছে।  কাজুবাদামের চাষ জনপ্রিয় করতে কৃষক ও উদ্যোক্তাদেরকে বিনা মূল্যে উন্নত জাতের চারা, প্রযুক্তি ও পরামর্শসেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। দেশে চলতি বছর কৃষককে বিনা মূল্যে ২০ লাখ কাজুবাদামের চারা দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *