তফশিল চূড়ান্তে আগামী সপ্তাহে বসছে ইসি


তফশিল চূড়ান্তে আগামী সপ্তাহে বসছে ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার। আগামী রোববার (৫ নভেম্বর) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই সাক্ষাতের পরের দিনই সোমবার কমিশন সভা হতে পারে। ওই সভায় নির্বাচনের তফশিল চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সেদিনই তফশিল ঘোষণা হবে না। 

তফশিল ঘোষণা করা হবে আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে। তবে সেদিন ঘোষণার তারিখ দিতে পারে ইসি। জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। এক্ষেত্রে ৪ বা ৬ জানুয়ারি বেছে নেওয়া হতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি কমিশনের সভায় চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে এ আভাস পাওয়া গেছে।

সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ক্ষণগণনা। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই মেরুতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে আসছে। হরতাল-ধর্মঘটের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের দাবিতে অনড় দলটি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করে আনছে।

তফশিল ঘোষণা ও ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে বুধবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে যে জনবলের প্রয়োজন হয়, তার এক শতাংশ নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। বাকি ৯৯ শতাংশই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী। সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেন সেই সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় নির্বাচনের সব এজেন্ডা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের বার্তা ছিল- একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যার যে দায়িত্ব সেটি যেন যথাযথভাবে পালন করেন। যাতে নির্বাচনের সময় কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়; তারা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। সচিব জানান, সংবিধানের মধ্যে যে সময় রয়েছে, তার মধ্যে নির্বাচন করতে ইসি বদ্ধ পরিকর। এ আয়োজনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বিভাগের প্রধানদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে সভা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনী প্রধানদের নিয়ে সভা হয়েছে। আজ (বুধবার) সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব, মহাপরিচালক, দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সব বিভাগকে তার কী করণীয় তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে; যাতে নির্বাচনের সময় কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হয়। কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, ভোটকেন্দ্রে যাতায়াত, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, ঋণখেলাপিদের তথ্য সংগ্রহসহ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার রেওয়াজ রয়েছে। বর্তমান কমিশন প্রথা ভেঙে প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। তফশিল ঘোষণার আগের আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতি জানাতে আগামী শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পৃথক দুটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আগামী ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই ৬ নভেম্বর কমিশনের একটি সভা হতে পারে। ওই সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল কবে ঘোষণা করা হবে, সেই তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে বলে তারা আভাস পেয়েছেন। তারা আরও জানান, আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করার শিডিউল রয়েছে। এ কারণে ১৩ নভেম্বর তফশিল ঘোষণা হতে পারে। এবারও বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে তফশিল ঘোষণা করবেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আরও যেসব আলোচনা : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নির্বাচন কমিশনার এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব ও সংস্থার প্রধানসহ ২৯ জন উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে ব্যাপক প্রচার চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি বর্জন করলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি ও প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। ওই সভায় বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

বৈঠকে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই পরীক্ষা শেষ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষা এবং প্রাথমিক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করবে। শুধু মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কিছু পরীক্ষা ডিসেম্বরে রয়েছে। ওই পরীক্ষা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে শেষ হবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়। কারণ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বৈঠকে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন সে বিষয়ে সিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন। আর তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের যেকোনো প্রচারণার কাজ যাতে মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছানো যায় সেই পদক্ষেপ নেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সব সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার জন্য আবেদন করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *