বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে সব পক্ষের দায় আছে


রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন ও ব্যবসায়ী—সব পক্ষেরই দায় আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, যথাযথ ব্যবস্থা নিলে অগ্নিঝুঁকি কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের আন্তরিক ভূমিকাও পালন করতে হবে।

আজ শনিবার অনলাইনে ‘বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড এবং উপানুষ্ঠানিক মার্কেটের অগ্নিঝুঁকি’ শীর্ষক এক পর্যালোচনা অনুষ্ঠান এমন অভিমত উঠে আসে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতিবিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বঙ্গবাজারের মতো উপানুষ্ঠানিক (সেমি–ফরমাল) সব বিপণিবিতানে অগ্নি প্রতিরোধব্যবস্থা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনমনীয় হওয়ার আহ্বান জানান।

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও শুধু নোটিশ দিয়েই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তথা সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস দায় এড়িয়েছে। জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিপণিবিতানের স্বত্বাধিকারী হিসেবে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ছিল অগ্নিনিরাপত্তার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা ও উদাসীনতারও দায় আছে, যা দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, ঢাকায় ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং চট্টগ্রামে ৫৪ দশমিক ২৯ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার দুই সিটির মালিকানাধীন বিপণিবিতানগুলোর মধ্যে আরও অন্তত ৩০টি বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি (ডিএসসিসি) এলাকায় ১১টি আর উত্তর সিটি এলাকায় (ডিএনসিসি) ১৯টি বিপণিবিতান আছে।

এমন অবস্থায় অগ্নিঝুঁকি কমাতে বিপণিবিতানের অভ্যন্তরীণ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা শক্তিশালী করা; ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা; ঘনবসতিপূর্ণ, সংকীর্ণ রাস্তা ও অপরিকল্পিত নগর এলাকার জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা; অগ্নিনিরাপত্তাকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়াসহ নানা সুপারিশ করা হয়।

বিশদ জরিপের মাধ্যমে সারা দেশের উপানুষ্ঠানিক বিপণিবিতানের অগ্নিঝুঁকি নিরসনে করণীয় সুনির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেন আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিপণিবিতানগুলোর অগ্নি সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে না পারলে আইন ও বিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থা নিলে অগ্নিঝুঁকি কমানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের আন্তরিক ভূমিকাও পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদ আবু তাহের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ রেদওয়ানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *