চৈত্রের দাবদাহে প্রশান্তির জলকেলি উৎসব
চৈত্রের দাবদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ঝড়-বৃষ্টির আভাস নেই। দেখা নেই ঠান্ডা হাওয়ার। চারপাশে রুক্ষ একটা ভাব। এমনই এক তপ্ত দিনে হৃদয় শীতল করার দ্বার খুলল জলকেলি উৎসব। ক্ষণিকের জন্য হলেও শত প্রাণকে রাঙিয়ে দিল এই আয়োজন।
মঙ্গলবার জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয় চট্টগ্রাম নগরের কাতালগঞ্জের নবপণ্ডিত বৌদ্ধবিহারে। রাখাইন নববর্ষ ১৩৮৫–কে বরণ করে নিতে উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম শাখা। নববর্ষ বরণের আনুষ্ঠানিক নাম ‘মাহা সাংগ্রেং পোয়ে’।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্ব থাকলেও মূল আকর্ষণ ছিল জলকেলি উৎসব। শুরু হয় বিকেল পাঁচটায়। উৎসব প্রাঙ্গণকে সাজানো হয় নানা রঙে। এক পাশে ছিলেন তরুণেরা, অন্য পাশে তরুণীরা। মাঝখানে ফাঁকা জায়গা। তরুণ-তরুণীদের সামনে ছিল পানিভর্তি ড্রাম, হাতে পাত্র। তা দিয়ে একে–অপরের দিকে জল ছিটাতে থাকেন তাঁরা। এ সময় বাজতে থাকে রাখাইন ভাষার গান।
বিকেলজুড়ে তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে জলকেলিতে মেতেছিলেন। তাঁদের উৎসাহ দিতে হাজির হয়েছিলেন রাখাইন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন বয়সী লোকজন। উৎসবের আনন্দে শামিল হতে বিহারে এসেছিলেন অন্যরাও। এমন আনন্দঘন মুহূর্ত অনেকে মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধারণ করেন।
আট বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরে থাকলেও আগে কখনো জলকেলি উৎসবে আসা হয়নি বেসরকারি চাকরিজীবী টিপু বড়ুয়ার। প্রথমবার এসেই আয়োজনে মুগ্ধ এই তরুণ বললেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। সেখানেও প্রতিবছর এমন সময়ে রাখাইনদের জলকেলি উৎসব হয়। ছেলেবেলা থেকেই তা দেখে আসছেন। এবার কাজের চাপ কম থাকায় চট্টগ্রাম নগরের উৎসবে এসেছেন।
জলকেলিতে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীরা জানালেন, জলকেলি নিয়ে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে, সেটি হলো এই উৎসবে তরুণ-তরুণীরা পছন্দের মানুষকে লক্ষ্য করে জল ছিটান। এর মাধ্যমে একে–অপরকে পছন্দের বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়। একসময় এই ধারণার সত্যতা থাকলেও এখন তা কমে এসেছে।
অবশ্য জলকেলির মাধ্যমে ‘পছন্দের’ বার্তা দেওয়ার ধারণা একেবারে যে লুপ্ত হয়েছে, তা মানতে রাজি নন গৃহিণী চিনু মারমা। এই জলকেলি উৎসবে অংশ নিয়ে স্বামী ক্য ক্য থিন রাখাইনের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় বলে জানালেন। এরপর প্রেম। তা থেকে পরিণয়। এখন সুখের সংসার। তিনি বললেন, জলকেলি উৎসবের আরও একটি দিক আছে। এর মাধ্যমে পুরোনো বছরের সব দুঃখ আর বিষাদকে বিসর্জন দেওয়া হয়। নতুন বছরের দিনগুলো যেন সুন্দর ও শুভ হয়, সে প্রার্থনাও করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল বুদ্ধস্নান। দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নবপণ্ডিত বিহারের অধ্যক্ষ উপানন্দ মহাথকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়। শেষ পর্বে ছিল জলকেলি উৎসব।
প্রথম আলো