সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত না করা


মোর্শেদুল আমিন শাহীন

মোর্শেদুল আমিন শাহীন
৯/জুন/ ২০২৩

আমাদের আশির কিংবা নব্বইয়ের দশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাব প্রকাশ যেন ভালো ছেলের প্রথম হওয়ার মতো একটি সুন্দর ইউনিক স্টাইল ছিলো। আমাদের কলেজে পড়ার সময়কালে যে সকল বন্ধু গর্ব করে মার্কিন বিরোধী রাজনীতির তুখোড় কর্মী ছিলেন, পরবর্তিতে বাম রাজনীতিতে ভালো নেতা হয়ে উঠেছিলেন। সে সকল নেতারা এখন সবাই মার্কিন ধমকেই শেখ হাসিনার মাথা নত করা উচিত বলে ভাবছেন।
এই মুহূর্তে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সরকারের অনেক কাজকর্মেই খুশি নয়।
মানছি শেখ হাসিনা তাঁর আশেপাশে অনেক গুলো ভাড়ার অদক্ষ লুটেরাদের নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন।
কিন্তু আমি এক চুল পরিমাণ বিশ্বাস করছিনা তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে কোন সন্দেহ করা যায়।
মুহূর্তের জন্যেও মনে আসছে না যে শেখ হাসিনা দেশের ক্ষতি হয় এমন কোন ভাবনা মনে স্থান দিবেন।

আমাদের দেশের জন্মলগ্ন থেকে অ্যামেরিকা বিরুদ্ধে ছিলো। এখন এসে ল্যাঙটা হয়ে নেমেছে। তার অনেক গুলো কারন আছে –
প্রথম – অ্যামেরিকান ডেমোক্রেট সরকার – শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের নির্দেশ মানতে না চাওয়ায় হিলারি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। হিলারি তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা হাসিনাবিরোধী কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে না চাওয়ায় হিলারি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বড় একটা কিছু করে উঠতে পারেননি।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব একটা নজর দেননি।
ডেমোক্রেটিক পার্টি আবার ক্ষমতায় আসায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে হিলারি ক্লিনটনের সমর্থকরা আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মানবতার ধুয়া তুলে এখন তারা হাসিনা সরকারকে জব্দ করার জন্য মাঠে নেমেছে। এরা হলো হাসিনা সরকারের এক নম্বর শত্রু। এদের সঙ্গে ড. ইউনূস এখনো আছে।

দ্বিতীয় – বিএনপি-জামায়াত এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ। এতদিন তারা সরকারবিরোধী কঠোর সমালোচনা চালিয়েও সফল হতে পারেনি। এখন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতা এবং মার্কিন দুতাবাসের সরাসরি অংশগ্রনে তারাও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পেট্র ডলারে যেমন বাংলাদেশের কিছু সুশীলকে বেচাকেনা করা যায়। তেমনি দেশের বাইরের দুষ্ট সুশীল কিংবা সাংবাদিকও বিকি কিনি হচ্ছে বলে শুনছি । এরা নতুন নতুন চ্যানেল আর ইউটিবার অপারেট করে সারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। আজকের এই অপচেষ্টা শুধুই শেখ হাসিনা সরকারের উপর নয়। এ আঘাত অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী সরকারের উপর। বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে হাসিনা সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি-জামায়াত। দেশে কী বিভীষিকা সৃষ্টি হবে, তা কল্পনা করাও যায় না। তাই কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ মার্কিন ও বিএনপি-জামায়াতের প্রচারণার সাফল্য কামনা করতে পারে না।

বিএনপি জামাতের রেখে যাওয়া সন্ত্রাসপুষ্ট একটি দেশ কে সন্ত্রাস মুক্ত করেছিলো র‍্যাব। এবং সেই সন্ত্রাস খুব সাফল্যের সাথেই তারা দমন করেছিলেন । পরবর্তীকালে তারা ক্ষমতাবহির্ভূত কিছু কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। র‌্যাবের কিছু সদস্যের ক্ষমতার বাড়াবাড়ি সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। সরকার একেবারে নিয়ন্ত্রণ করেনি তা নয়। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় যে র‌্যাব অফিসার জড়িত ছিলেন, তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলেও দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলেছে। বিরোধীদলীয় নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় প্রকাশ্য দিবালোকে যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে, তা বিশ্বে একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। কই অ্যামেরিকা অমন মানবতা বিরোধী ঘটনার কোন অভিযোগ তুলেনি।
আজ অ্যামেরিকা খুব মানবতাবাদী সাজার কারণ এশিয়ায় চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের যুগে বাংলাদেশকে চীনের বন্ধু হওয়া থেকে বাধা দেওয়া এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এ ব্যাপারে তারা কয়েকটি পরিকল্পনার কথা বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বাংলাদেশ এতকাল এগুলো না মেনে চলায় এই চাপ।
আমেরিকায় যেসব মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ হচ্ছে, সে তুলনায় বাংলাদেশে তার কানাকড়িও হচ্ছে না। কিন্তু রাক্ষস এখন নিজের দাঁতের রক্ত মুছে বাংলাদেশকে মানবতাবিরোধী বলে শাসাচ্ছে। আর বিএনপি সেই রক্তচোষার সাহায্য গ্রহণে মীরজাফরের ভূমিকা গ্রহণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
আন্তর্জাতিক মহলে শোনা যায় – আমেরিকার সিনেটর অথবা কংগ্রেসম্যানদের নির্বাচনি প্রচারণার জন্য ডোনেশন সংগ্রহ করা একটি বৈধ ব্যাপার । এ সুযোগে বিএনপি-জামায়াত কোনো কোনো কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরদের কেনাবেচা করেছেন । আর সেই পেট্রো ডলারের প্রচারণায় দেশ বিদেশে শেখ হাসিনার অপপ্রচারে মুখর এই সময়। সরকারের সুশাসনের অভাবকে তিল কে তাল বানানোর প্রচারনায় ছেয়ে গেছে অনলাইন জগত। এসকল অপপ্রচার দেশের স্বাধীনতার ভিত্তিকেই ধ্বংস করতে চাচ্ছে। মিথ্যা প্রচার ও বিদেশি সাহায্য গ্রহণ করে ১৭৫৭ সালের মতো শুধু দেশের সরকারকে নয়, দেশের স্বাধীনতাই হুমকির সম্মুখীন ।
এমন একটি প্রেক্ষিতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যতই সমালোচনা করি, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এ মুহূর্তে তাদের পাশেই থাকার বিবেক তাড়না করে। দেশের প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক মানুষকে আজ মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকেছে। একটি সামরিক সরকারকে বাংলাদেশের মাথার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আজ সে আবার মানবতাবাদী সেজে বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্তে সাহায্য জোগাতে এসেছে।

হাসিনা সরকারের উচিত হবে, মার্কিন ধমকের কাছে মাথা নত না করে শক্ত অবস্থান নেওয়া। যারা মনে করেন, এই শক্ত অবস্থান নিলে অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে বাংলাদেশকে পঙ্গু করা হতে পারে, তারা রজ্জুতে সাপ দেখছেন। বাংলাদেশকে সাহায্যদানের ব্যাপারে আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থও রয়েছে। এ স্বার্থহানির ভয়েই হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থানে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।

বর্তমানে যে কয়জন সিনিয়র নেতা বিশ্বে আছেন, তাঁদেরে মধ্যে প্রজ্ঞায় মেধায় শেখ হাসিনা অন্যতম এবং একজন দক্ষ কুশলী নেত্রী। তিনি জানেন কী করে চীন ও আমেরিকার চাপের মুখে দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখা যায়।
শেখ হাসিনার কাজ হবে এখন – নিজের বিবেচনায় নিজের দলের অদেশপ্রেমিক নেতাদেরে কে দূরে রাখা, প্রশাসনের অসৎ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া। নিজের ব্যক্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বিরাট ষড়যন্ত্রের হাত থেকে পুনুরুদ্ধার করা।

মোর্শেদুল আমিন শাহীন

লেখক, অনলাইন এক্টিভিটস


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *