হিরোশিমার চেয়েও তিনগুণ বেশি বোমা গাজায়


গাজা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমার চেয়েও তিনগুণ বেশি বোমা ফেলা হয়েছে গাজা উপত্যকায়। যুদ্ধ শুরুর পর গত ৮৯ দিনে (শনিবার পর্যন্ত) ৬৫ হাজার টনেরও বেশি ওজনের প্রায় ৪৫ হাজারেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরাইল। বুধবার গাজা মিডিয়া অফিস এই তথ্য জানিয়েছে। আনাদুলো এজেন্সি, রয়টার্স, আলজাজিরা। গাজা মিডিয়া অফিস জানায়, গাজায় সব আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে ইসরাইল ৪৫ হাজারেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাবর্ষণ করেছিল, যার মধ্যে কয়েকটির ওজন ছিল দুই হাজার পাউন্ড। গাজা উপত্যকায় ইসরাইল সেনাবাহিনীর ফেলা বিস্ফোরকের ওজন ৬৫ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে, যা জাপানের হিরোশিমা শহরের মতো তিনটি পারমাণবিক বোমার ওজন ও শক্তির চেয়েও বেশি। ইসরাইলের ব্যবহৃত এসব বোমা ও  ক্ষেপণাস্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশই অনির্দেশিত ও ভুল, যা সাধারণত ‘বোবা বোমা’ নামে পরিচিত।

ইসরাইলের ব্যবহার করা এই ধরনের বোমার ব্যবহার দখলদারদের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বিচারে ও অন্যায়ভাবে হত্যার লক্ষ্যবস্তু এবং আন্তর্জাতিক আইন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেছে মিডিয়া অফিস। গাজা মিডিয়া অফিস বেসামরিক নাগরিক, শিশু ও নারীদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের প্রায় নয়টি আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারকে নথিভুক্ত করেছে। মিডিয়া অফিস ইসরাইলের যেসব বোমা চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে আছে বাংকার-বাস্টিং বোমা অব টাইপ (বিএলইউ-১১৩), (বিএলইউ-১০৯), (এসডিবিএস), আমেরিকান টাইপ (জিবিইউ-২৮), অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য জিপিএস সিস্টেম পরিচালিত, সাদা ফসফরাস, স্মার্ট বোমা এবং হালবার্ড গুডুম মিসাইল। গাজায় এখনো এসব বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ২২ হাজার ৪৩৮ জন। আহতের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৬১৪ জন। আলজাজিরার শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেইর আল-বালাহর কাছে নুসিরাত, আল-মাগাজি ও বুরেইজ শরণার্থী শিবিরসহ অন্যান্য জায়গায় বোমা হামলা চালিয়েছে দেশটি। এদিনের হামলায় শুধু খান ইউনুসেই ৩২ জন নিহত হয়েছেন। রাফাহতে নিহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।

গাজায় হামলা চলাকালীনই অঞ্চলটি নিয়ে নতুন ‘নীলনকশা’ প্রকাশ করেছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার যুদ্ধপরবর্তী গাজা প্রশাসন নিয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট তার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হামাস অথবা ইসরাইল- কেউই এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড শাসন করবে না। তবে কিছু নির্দিষ্ট শর্তের বিনিময়ে গাজা উপত্যকার শাসনক্ষমতা ফিলিস্তিনিরা পাবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, গাজায় ইসরাইল চাইলে পশ্চিম তীরের মতো যে কোনো সময় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। এ সময় গাজার সীমান্ত অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলি বাহিনীর হাতে থাকবে। যুদ্ধ শেষে গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরাইল বজায় রাখবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।  আরও বলেন, গাজা অঞ্চলের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করবে আন্তর্জাতিক বাহিনী। আর এ পরিকল্পনায় একটি অনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করবে মিসর। এছাড়া যুদ্ধের পর অঞ্চলটিতে কোনো ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক থাকতে পারবে না বলেও উলে­খ করেছিলেন তিনি। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, যুদ্ধপরবর্তী গাজা অঞ্চলের শাসনভার যার হাতে থাকবে তার কাজ হবে ইসরাইলের জন্য কোনো প্রকার হুমকি সৃষ্টি করে এমন কার্যক্রম বন্ধ করা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *