হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য


নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতান্তর তাঁর শীর্ষ সহযোগীর

নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতান্তর তাঁর শীর্ষ সহযোগীর

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সত্য কথা বলছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরই যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গাদি আইসেনকট। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই যুদ্ধের ঘোষিত মূল লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করা কার্যত অবাস্তব। আর একমাত্র যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই হামাসের হাত থেকে বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা সম্ভব। ইসরায়েলি সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল ১২ নিউজকে গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে সাবেক জেনারেল গাদি আইসেনকট গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর মতবিভেদের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যাঁরা উত্তর গাজায় বড় হামলা চালিয়ে হামাসের সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন, তাঁরা সত্যটাই বলেছেন। কিন্তু যাঁরা দাবি করছেন, হামাস চরমভাবে পরাজিত হয়েছে, তাঁদের যুদ্ধ করার ইচ্ছা ও সামর্থ্য ফুরিয়ে গেছে, তাঁরা আসলে সত্য বলছেন না। এমন আষাঢ়ে গল্প বলার কোনো প্রয়োজন নেই।’

এদিন আইসেনকটের বক্তব্য দেওয়ার কিছু সময় আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু আবারও বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিজয়ের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। উত্তর গাজা থেকে  ইসরায়েলের কিছু সেনা প্রত্যাহারের পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে গাজা যুদ্ধে নিজের সৈনিক ছেলেকে হারানো আইসেনকট দাবি করেন, এই যুদ্ধে কৌশলগত সাফল্য আসেনি। ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে পারেনি। আইসেনকটের মন্তব্যে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের মধ্যে ফাটল আরো বড় হওয়া এবং তাঁর যুদ্ধ পরিকল্পনা ঘিরে অসন্তোষ বৃদ্ধির লক্ষণ ফুটে উঠেছে। এরই মধ্যে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের সঙ্গে নেতানিয়াহুর কথাবার্তা পর্যন্ত প্রায় বন্ধ। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন পর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেন নেতানিয়াহু। এতে ঠাঁই পান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ আইসেনকট। গাজায় গত ডিসেম্বরে এক বিস্ফোরণে নিজের ছেলেকে হারিয়েছেন আইসেনকট। বতর্মানে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান ঘিরে নেতানিয়াহুর সমালোচক হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

ঘণ্টায় দুজন মা নিহত :  ইউএন ওমেন
গাজায়  ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে দুজন করে মা নিহত হচ্ছেন। জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন ওমেন গত শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়। ইউএন ওমেনের নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস বলেন, ‘৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমরা আরো একবার  দেখলাম, সংঘাতের প্রথম ভুক্তভোগী হয় নারী ও শিশুরা। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় যারা নিহত হয়েছে তাদের ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু বলে প্রতিবেদনে জানায় ইউএন ওমেন। ইউএন ওমেনের সিমা বাহাউস আরো বলেন, ‘এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে মানসিক আঘাত সঞ্চারিত হচ্ছে, তা আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে আমাদের তাড়িত করবে।’

গাজাজুড়ে গতকাল শনিবারও হামলা ও সংঘাত অব্যাহত থাকে। গতকাল স্থানীয় সময় সকালে বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদদাতা বিশেষ করে খান ইউনিস শহরে গুলির শব্দ, বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণের খবর দিয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে উত্তর গাজায় হামাসের নেতৃত্ব কাঠামো তছনছ করে দেওয়ার দাবি করেছিল ইসরায়েলি সেনারা। তারা বলেছিল, সেখানে এখন বিক্ষিপ্তভাবে হামাস যোদ্ধারা রয়েছে। তবে হামাসের সশস্ত্র শাখা গতকাল উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোদ্ধাদের তুমুল লড়াইয়ের খবর দিয়েছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৬৫ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে। চার মাস ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ২৪ হাজার ৯২৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ।

সূত্র :  এএফপি, সিএনএন, আলজাজিরা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *