রোমে বাংলাদেশির ঘরে ইউরোর খনি!
পলাশ রহমান, ভেনিস, ইতালি
রোমের পুলিশ বিশাল একটা ইউরোর খনি আবিষ্কার করেছে। প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ইউরোর ওই খনি আবিষ্কৃত হয়েছে একজন অভিবাসী বাংলাদেশির ঘর থেকে। ৪০ বছর বয়সের ওই অভিবাসী বাংলাদেশির বেডরুমের খাটের ম্যাট্রেস কেটে পুলিশ খনিটি আবিষ্কার করেছে।ইউরোর ম্যাট্রেসে ঘুমানো ওই অভিবাসী ইতালিতে নতুন আসা বাংলাদেশিদের সাথে প্রতারণা করতেন। বলা যেতে পারে তিনি পেশাগত প্রতারক ছিলেন।যারা ইতালিয় ভাষা জানে না, নতুন এসেছে, কাগজপত্র নেই বা ঝামেলা আছে, এমন অভিবাসীদের তিনি টার্গেট করতেন। স্থানীয় কাগজপত্র করে দেয়ার কথা বলে, চাকরি দেয়ার কথা বলে, পাসপোর্ট করে দেয়ার কথা বলে টাকা নিতেন। ভুয়া কাগজপত্র করে দিতেন।ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ সময়ে বুঝতে পেরেও চেপে যেতেন। স্থানীয় কাগজপত্র না থাকা, ভাষা না জানাসহ বিভিন্ন কারণে তারা নতুন কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাইতেন না। কিন্তু সম্প্রতি একজন ভুক্তভোগী চেপে যাননি। তিনি সোজা পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করেছেন। তার দেয়া তথ্য মতে পুলিশ প্রথমে কিছু দিন ইউরো ম্যানকে ফলো করে এবং এক পর্যায়ে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে আবিষ্কার করে ইউরো খনি।ইতালির বিভিন্ন শহরে প্রায়ই শোনা যায়, কিছু মানুষ এ জাতীয় প্রতারণার সাথে যুক্ত। তারা বিশেষ করে নতুনদের সাথে নানা ভাবে প্রতারণা করে। চাকরি দেয়া, বাসা দেয়া, কাগজ করে দেয়া, মামলা মকোদ্দমায় সহযোগীতা করাসহ হরেক রকম প্রতারণার দোকান তারা।এ ছাড়া কিছু আছে মৌসুমী প্রতারক। তারা সারা বছর প্রতারণা না করলেও ইতালিতে যখন স্পন্সর ভিসা বা ভেতরে থাকা অবৈধদের বৈধ করার ঘোষনা হয়, তখন তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। মানুষকে উল্টা-পাল্টা বুঝিয়ে, স্পন্সর জমা দেয়ার নকল রসিদ বানিয়ে, নকল এনওসি বানিয়ে প্রতারণা করে।
সিজন্যাল ভিসায় কেউ ইতালি আসলে ৯ মাস পরে তাকে বাধ্যতামূলক নিজ দেশে ফেরত যেতে হয়। এই তথ্য গোপন করে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ইতালি আসার পরে কাগজপত্র করে দেয়া তো দুরের কথা, একটা চাকরি পর্যন্ত যোগাড় করে দেয় না। কোনো সহযোগীতা করে না। নতুন মানুষটা পড়ে অথৈ সাগরে। চাকরি নেই, কাগজ নেই, থাকা-খাওয়ার খরচ নেই, ঘাড়ের উপর ধার-দেনার বোঝা বা পরিবারের বোঝা নিয়ে মানুষটার তখন পাগল হওয়ার উপক্রম হয়। এসব নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া-ঝাটি, দেন-দরবার হতে দেখা যায়।
এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে সিজন্যাল ভিসায় ইতালিতে আসা মানুষদের কাগজপত্র করে দেয়ার কথা বলে প্রতারণা করে। হাজার হাজার ইউরো হাতিয়ে নেয়। অথচ যারা এসব করে তারা নিজেরাও জানে সিজন্যাল ভিসায় ইতালিতে আসা মানুষদের বৈধ হওয়ার কোনো সাধারণ সুযোগ নেই। তারা বৈধতার আবেদন করে মানুষগুলোকে কিছু দিন ঘুরিয়ে, পরে বলে আবেদন রিজেক্ট হয়েছে।
পরামর্শঃ এই জাতীয় কোনো রকমের প্রতারণার শিকার হলে সরাসরি ইতালিয় পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করবেন। ভাষা না জানলে ভাষা জানা কাউকে নিয়ে যাবেন। আপনি নিতে না পারলে প্রয়োজনে পুলিশ দোভাষী জোগাড় করবে। কোনো ভয় করবেন না। আর যা’ই হোক আপনি সুবিচার পাবেন। প্রতারিত হওয়ার প্রতিকার পাবেন।
অনেকে অনেক কথা বলে ভয় দেখাবে। কোনো কথায় কান দেবেন না। পুলিশে অভিযোগ করলে বাংলাদেশিদের কোনো ক্ষতি হবে না। কম্যুনিটির কোনো দুর্নাম হবে না। বরং ভালো হবে। প্রতারকরা সাবধান হবে। প্রতারণা প্রতিরোধে সহযোগিতা করার জন্য আপনার ব্যক্তিগত পুনতি বাড়বে। দেশের ইমেজ বাড়বে।