ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪

ভেনিসে সিরাতে রাসুল সম্মেলন অনুষ্ঠিত স্বামী হিসাবে রাসুল (স) কেমন ছিলেন?


ইতালির ভেনিসে অভিবাসী আলেম ওলামাদের উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যায় নবী মোহাম্মদ (স) এর জীবনী ভিত্তিক সিরাতে রাসুল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মেসত্রের মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের হল রুমে আয়োজিত এ সম্মেলনে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করেন, ভিচেন্সার আল জান্নাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শামসুল হুদা মাহবুব, মেসত্রে পুরান মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রাজ্জাক, মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আরিফ মাহমুদ, ইয়েজলো জামে মসজিদের সাবেক খতিব মাওলানা জাকির হোসাইন ও মেসত্রে পুরান মসজিদের সাবেক ইমাম মাওলানা আব্দুল কাদের।

হাফেজ আবদুস সালাম ও আব্দুল আজিজের উপস্থাপনায় সিরাত সম্মেলনে কয়েকশ অভিবাসী মুসল্লি অংশ গ্রহণ করেন। বাদ এশা সম্মেলন শেষ করা হয় এবং মুসল্লিদের মধ্যে তবারক বিতরণ করা হয়। আসর নামাজের পর শুরু হওয়া সম্মেলন দুই পর্বে ভাগ করা হয়। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে বয়ান করেন মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আরিফ মাহমুদ। নবী মোহাম্মদ (সঃ) স্বামী হিসাবে কেমন ছিলেন, এ বিষয়ে বয়ান করতে গিয়ে মাওলানা আরিফ বলেন, নবী এমন এক সময়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন, যখন নারীকে মানুষ বলে গণ্য করা হতো না। মেয়ে শিশুদের জীবিত মাটি চাপা দিয়ে মেরে ফেলা হতো। নারীর জন্মকে লজ্জাজনক মনে করা হতো। সেই সমাজে নবী যখন বলেন, নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তখন সবাই নবীকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। তাদের কাছে ‘নারীর অধিকার’ কথাটা নতুন ছিলো। তারা মনে করতো- নারীর আবার অধিকার কী? নারী তো শুধুই ভোগ্যপণ্য। সিরাত সম্মেলনের আলোচকগণ বলেন, নবী কখনো স্ত্রীদের সাথে খারাপ আচারণ করতেন না। গালমন্দ করতেন না। স্ত্রীরা রাগ করলে, ঝগড়া করলেও নবী তাদের বোঝাতেন। ভালোবাসা দিয়ে মন জয় করতেন। নবী তার পারিবারিক জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, সংসার সুখের করতে বেশি দায়িত্ব পুরুষকে পালন করতে হয়। পুরুষের ধর্য, শরিয়ত সম্মত উদারতা বেশি থাকতে হয়। কিন্তু নবীর উম্মতরা কথায় কথায় স্ত্রীদের উপর রেগে যান, গালমন্দ করেন। স্ত্রীদের ছোট ছোট ভুলগুলোও ক্ষমা করতে পারেন না। প্রতিক্রিয়া দেখান। যা কোনো ভাবেই প্রিয় নবীর শিক্ষা নয়। আমাদের প্রিয় নবীর শিক্ষা হলো স্ত্রীদের ‘ভালোবাসা’ দিয়ে বোঝানো। ভুল হলে তাদের কাছে ‘সরি’ বলা। তাদের মূল্যায়ন করা। সম্মান রেখে কথা বলা। কিন্তু নবীর উম্মতরা মনে করেন, রাগ করার অধিকার শুধু স্বামীদের। স্বামীদের কোনো ভুল হয় না। স্বামীরা ‘সরি’ বলে না।

যা প্রিয় নবীর শিক্ষার ঠিক বিপরীত। আমাদের প্রিয় নবীর একজন স্ত্রী একবার রাগ করে তরকারির পেয়ালা ছুড়ে ফেলেছিলেন নবীর সামনে। প্রিয় নবী তার উপর উল্টো রাগ দেখাননি। গালমন্দ করেননি। বরং তার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। সঠিক মূল্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু নবীর উম্মতরা মনে করেন, আমাদের নবীর স্ত্রীরা সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতেন। জি হুজুর, জি হুজুর করতেন। কিন্তু না, তারা স্বামী হিসাবে নবীর সাথে সাধারণ নারীদের মতোই আচারণ করতেন। রাগ করতেন। অভিমান করতেন। পরিমিত ঝগড়া করতেন। সম্মানের সাথে সংসারও করতেন। বিপরীতে নবী প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে, তাদের মূল্যায়ন করতেন। ভালো কাজের প্রশংসা করতেন। সুতরাং স্ত্রী, সন্তানদের সাথে কেমন আচারণ করতে হবে, তাদের কী কী অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, তা প্রিয় নবী শুধু নছিহতই করেননি, নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। বক্তারা বলেন, পাশ্চত্যের এই ঘুনে ধরা সমাজে পারিবার ঠিক রাখতে হলে, পারিবারিক ভাবে সুখি হতে হলে, সবাইকে নবীর সিরাত জানতে হবে এবং নিজের পরিবারে তা এ্যপলাই করতে হবে। উল্লেখ্য, ইতালির ভেনিসে এবারই প্রথম আলেমদের উদ্যোগে সিরাত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *