ভারতের শীর্ষ ধনী এখন কারা, তাঁদের সম্পদমূল্য কত
ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের শতকোটি ডলারের মালিকদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ভারতীয়দের সংখ্যা বেড়েছে, তবে তাঁদের সম্পদমূল্য কমেছে। এর মূল কারণ হিনডেনবার্গ ঝড়ে বিপর্যস্ত গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমে যাওয়া।
ফোর্বসের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ধনীদের তালিকায় ভারতীয়দের সংখ্যা ১৬৯। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৬৬। কিন্তু এই এক বছরে সময়ে তাঁদের সামগ্রিক সম্পদমূল্য ১০ শতাংশ কমেছে। ২০২২ সালে ভারতীয় ধনীদের মোট সম্পদমূল্য ছিল ৭৫০ বিলিয়ন বা ৭৫ হাজার কোটি ডলার, ২০২৩ সালে যা নেমে এসেছে ৬৭৫ বিলিয়ন বা ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে।
মূলত গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমার কারণে ভারতীয় ধনীদের সম্পদমূল্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার কমেছে। ২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির সাজানো বাগান রীতিমতো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রতিবেদনের অভিযোগ, গৌতম আদানি কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন। তাতেই ফুলেফেঁপে ওঠে তাঁর ব্যবসায়ী সাম্রাজ্য।
প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির সম্পদমূল্য অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। আজ সোমবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় তাঁর সম্পদমূল্য ছিল ৪৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। ফোর্বসের ধনীদের তালিকায় তাঁর স্থান ছিল ২৫তম। অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি কিছু সময়ের জন্য ফোর্বসের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেও ছিলেন। এমনকি জানুয়ারি মাসের বেশির ভাগ সময় তিনি ছিলেন পৃথিবীর তৃতীয় শীর্ষ ধনী।
ভারতের শীর্ষ ১০ ধনী | |
---|---|
নাম | সম্পদমূল্য (ডলার) |
১. মুকেশ আম্বানি | ৮৩.৪ বিলিয়ন |
২. গৌতম আদানি | ৪৭.২ বিলিয়ন |
৩. শিব নাদার | ২৫.৬ বিলিয়ন |
৪. সাইপ্রাস পুনাওয়ালা | ২২.৬ বিলিয়ন |
৫. লক্ষ্মী মিত্তাল | ১৭.৭ বিলিয়ন |
৬. সাবিত্রী জিন্দাল | ১৭.৫ বিলিয়ন |
৭. দিলীপ সাংভি | ১৫.৬ বিলিয়ন |
৮. রাধাকৃষ্ণান দামানি | ১৫.৩ বিলিয়ন |
৯. কুমার বিরলা | ১৪.২ বিলিয়ন |
১০. উদয় কোটাক | ১২.৯ বিলিয়ন |
সূত্র: ফোর্বস ম্যাগাজিন |
গত বছর ভারতের অন্য ধনীদের সম্পদমূল্যে বড় ধরনের পতন না হলেও সামগ্রিক প্রবণতা ছিল নিম্নমুখী। ওষুধ কোম্পানির মালিক দিলীপ সাংভি ছাড়া ভারতের শীর্ষ ১০ ধনীর সম্পদমূল্য গত বছর কমবেশি কমেছে। চলতি বছর ১০ মার্চের শেয়ার মূল্য ও মুদ্রার বিনিময় হারের সাপেক্ষে ধনীদের সম্পদমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর কারা আছেন ধনীদের তালিকায়
গৌতম আদানির আগে মুকেশ আম্বানি ছিলেন ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী। গত বছর তাঁর সম্পদমূল্য ৮ শতাংশ কমলেও তিনি এখনো ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো তাঁর রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক রাজস্ব ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করে। ৬৫ বছর বয়সী মুকেশ আম্বানি এখন পরবর্তী প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছেন। তাঁদের সেভাবে গড়ে তুলছেন। তাঁর তিন সন্তান এখন তিন ব্যবসার কর্ণধার, টেলিকম ব্যবসার দায়িত্ব আকাশ আম্বানির হাতে, খুচরা ব্যবসা ইশার হাতে আর পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবসা অনন্তের হাতে।
গত বছর সারা বিশ্বেই প্রযুক্তি খাতের জৌলুশ অনেকটা কমেছে। ফলে ভারতের সফটওয়্যার খাতের বড় ব্যবসায়ী শিব নাদারের সম্পদমূল্য ১১ শতাংশ কমেছে। নেমে এসেছে ২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারে।
আরেক দিকে ভারতের টিকা জগতের রাজা হিসেবে খ্যাত সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কর্ণধার সাইরাস পুনাওয়ালার সম্পদমূল্য ৭ শতাংশ কমেছে। টিকার চাহিদা মোটামুটি পূরণ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ব্যবসা কমেছে। তবে টিকা ছাড়াও আর্থিক খাতে তাঁর ব্যবসা আছে। পুনাওয়ালার সম্পদমূল্য এখন ২ হাজার ২৬০ কোটি ডলার।
ভারতের খুচরা ব্যবসার জগতের বড় নাম রাধাকৃষ্ণান দামানি। তাঁর মালিকানাধীন ডি মার্ট ভারতের ওয়ালমার্ট হিসেবে খ্যাত। কিন্তু গত বছর ছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়। ফলে তাঁর ব্যবসা ভালো যায়নি। তাঁর সম্পদমূল্য এখন দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে।
দামানি এখনো ভারতের শীর্ষ ১০ জন ধনীর একজন হলেও তালিকায় পঞ্চম স্থান হারিয়েছেন ইস্পাত সাম্রাজ্যের অধীশ্বর লক্ষ্মী মিত্তালের কাছে। তাঁর এক কোম্পানির রাজস্ব ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি ডলার।
এদিকে ভারতের শীর্ষ ধনীর তালিকায় একমাত্র নারী হচ্ছেন সাবিত্রী জিন্দাল। এ ছাড়া শতকোটিপতি অন্যান্য নারীর মধ্যে আছেন ফাল্গুনি নায়ার। স্বপ্রতিষ্ঠিত এই নারী ধনীর সম্পদমূল্য এখন ২৬০ কোটি ডলার, আগের বছরে যা ছিল ৪৫০ কোটি ডলার।
তালিকায় নতুন স্থান পাওয়া ধনীদের মধ্যে আছেন ৩৬ বছর বয়সী নিখিল কামাথ ও তাঁর ভাই নিতিন কামাথ। নিখিল কামাথ এই তালিকায় সবচেয়ে কনিষ্ঠ। এ ছাড়া গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি এক হাজার কোটি ডলারের মালিক হলেও সাইপ্রাসের পাসপোর্টধারী হওয়ায় তাঁর নাম তালিকায় আসেনি।
গত বছরের তালিকা থেকে ২৩ জন ধনী এবার বাদ পড়েছেন। পুরোনো অনেকে আবার ফিরে এসেছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে আছেন ধাতব পদার্থের বড় ব্যবসায়ী অনিল আগরওয়াল। ঋণভারে জর্জরিত হওয়ার কারণে তিনি তালিকা থেকে ঝরে পড়েছেন।
এ ছাড়া ভারতের আর্থিক লেনদেন জগতের পুরোধা বিজয় শেখর শর্মাও বাদ পড়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ওয়ান ৯৭ কমিউনিকেশনসের শেয়ারের দরপতন হয়েছে। মূলত পেমেন্টের জগতে পেটিএম অ্যাপের বাড়বাড়ন্তের কারণে বিজয় শেখরের কোম্পানি মার খেয়েছে।