ন্যাটো শা‌ন্তি প্রস্তাব…আরেক‌টি প্রহস‌নের মঞ্চায়ন


এম,এ হক

নরওয়েজিয়ান সংবাদপত্র থে‌কে প্রাপ্ত এক খব‌রে, ন্যাটোর সেক্রেটারি চিফ অফ স্টাফ জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, আমি মনে করি ইউক্রেনেকে রা‌শিয়ান দখলকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দি‌য়ে ন্যাটোর সদস্যপদ লাভ করা উচিৎ। নরওয়ের ভি,জি পত্রিকার মতে, ন্যাটোর সদস‌্য দেশগু‌লোর মধ্যে এ ধর‌ণের আলোচনা ইতিমধ্যেই চলছে। এটি হয়ত সংঘাত থামা‌নোর একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। তা‌দের ধারণা এটি বাইডেন প্রশাসন এবং ইউক্রেনের জন্য এক প্রকা‌রের জয়। তারা সম্ভবত একরকম ঘোষণাও করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যে‌তে পা‌রে “ঠিক আছে আমরা দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু আমরা ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্ত ক‌রেছি।  এটি একপ্রকা‌রের জয়।” ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ দেওয়ার জন্য তারা এই আঞ্চলিক ক্ষতি স্বীকার করে নি‌চ্ছে।
তবে ইউক্রেনীয়রা এটা মে‌নে নি‌তে নারাজ। তারা যুদ্ধই চায়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো রাশিয়া কেন এতে রাজি হবে? যখন তারা যুদ্ধ‌ক্ষে‌ত্রে জিতেই যা‌চ্ছে। বিশ্লেষকদের মতানুসা‌রে খুব বড়সড় রাশিয়ান আক্রমণ এক বা দুই মাসের মধ্যেই আসছে।রাশিয়া ইতিমধ্যেই কুপিয়ানস্ক দখলের দ্বারপ্রা‌ন্তে। এটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী এবং ন্যাটোর জন্য একটি বড় ধাক্কা। রাশিয়া ন্যাটোর প্রস্তাব কখনই গ্রহণ করবে না। আর কেনই বা করবে, কারণ এই পুরো সংঘাতই হ‌চ্ছে ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভূ‌ক্তি নিয়ে।

জেলেনস্কির মুখপাত্র মিঃ পোডোলিয়াক এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, “ন্যাটোতে অন্তর্ভূ‌ক্তির জন্য রা‌শিয়া কতৃক দখলকৃত অঞ্চল ছে‌ড়ে দেওয়া হাস্যকর। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি শোচনীয় পরাজয়ের শিকার না হন, তবে রাশিয়ার রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হবে না এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হবে না। যা না হ‌লে রাশিয়ার আগ্রাসী ম‌নোভাব আরও বে‌ড়ে যাবে।”
ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান আলেক্সি দানিলভ মঙ্গলবার বলেছেন যে, কিয়েভ কখনোই পুতিনের সরকারের সাথে আপোস করবে না এবং ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থকদের কেউই শান্তির জন্য চাপ দিচ্ছে না এবং “রাশিয়াকে কার্থেজের মতো ধ্বংস করতে হবে”।
দুর্ভাগ্য ড্যানিলভের জন্য কারণ এখা‌নে পশ্চিমা বিশ্বই কার্থেজের ভাগ‌্য বরণ কর‌ছে, রাশিয়া নয়।

ন্যাটোর এই সম্ভাব্য শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেনের কেউই মেনে নেবে না। কিন্তু ন্যাটোর কর্মকর্তারা সম্ভবত এই ধারণাটিকে বেশ গুরুত্ব দি‌চ্ছে। তারা এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখাতে পারে।
কিন্তু ব‌্যক্তিগতভা‌বে আমি মনে করি না তারা সেটা করার সুযোগ পাবে।
জর্জ সোরোসের ওএসএফ থেকে প্রাপ্ত খব‌রে জানা যায় ইউক্রেন হে‌রে যা‌বে বা বৈ‌শ্বিক অভিজাতদের কব্জায় থাক‌বে না। ব্লুমবার্গ ও রয়টার্সের প্রাপ্ত নথি থে‌কে জানা যায় জর্জ সোরোসের ছেলে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন পরিচালনা করছেন। এবং তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখন এটি বিশ্বের অন্যান্য অংশে এর প্রচেষ্টাকে কা‌জে লাগা‌তে যাচ্ছে। সম্ভবত এশিয়া এবং চীনের উপরই তার নজর। জর্জ সোরোস চীন এবং প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংকে একেবারেই সহ‌্য করেন না। চীনের ধ্বংসই তার কাম‌্য। তাই সোরোসের ছে‌লে তার বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে চায়। রয়টার্সের তথ‌্যানুসারে সোরোস তার বেশিরভাগ ইইউ প্রকল্প বন্ধ করে দেবে।

এটিকে ব্যাখ্যা করার ভিন্ন উপায়ও রয়েছে। ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের এই পদক্ষেপের অর্থ হতে পারে যে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্ত নেতৃত্ব‌কে কব্জা করেছে, তারা সকলেই বৈ‌শ্বিক আরাম আয়ে‌শে অনুরক্ত এবং এর জন‌্য কো‌নো তদন্তের প্রয়োজন নেই। তাহলে এখানে টাকা বিনিয়োগ কেন? তারা তাদের তহবিল এশিয়া ও আফ্রিকায় সরিয়ে নি‌চ্ছে। সুতরাং এটি একটি সংকেত হতে পারে যে, সোরোস ফাউন্ডেশন ইউরোপকে মূল্যহীন হিসাবে দেখ‌ছে। এমনটাই ইঙ্গিত দি‌য়ে‌ছে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন।
ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন যে, এনজিওটি ইউক্রেন, মোল্দোভা এবং পশ্চিম বলকান সহ ইউরোপে কিছু অনুদান প্রদান অব্যাহত রাখবে। এই অনুদান আগামী মাসগুলিতে নির্ধারিত হবে।

গত কয়েক দশকে ওএসএফ বিভিন্ন প্রকল্পে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে, যার মধ্যে ২০২১ সালে ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার প্রকল্পগুলির জন্য ২০৯ মিলিয়ন ডলারও রয়েছে।

হয়ত তাদের বাজেট ২৫ বা ৩০ বিলিয়নের মতো। এই অর্থ তারা যে কো‌নো দে‌শের সরকার পরিবর্তনের জন‌্য বিশৃঙ্খলা সৃ‌ষ্টি করা ও যুদ্ধের জন্য ব্যয় করে।

মস্কোতে ২১ তম নিরাপত্তা সম্মেলনে রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ওঠা আন্তঃরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে চায়।” তিনি আরও যোগ করেছেন যে তথাকথিত ইন্দো-প্যাসিফিক জো‌টের আহ্বান মূলত ওয়াশিংটন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সামরিক ও রাজনৈতিক জোট তৈরীর লক্ষ্যে। তি‌নি ব‌লেন, “আমরা এ ধারণা‌কেও উড়িয়ে দিচ্ছি না যে এটি AUKUS ব্লক দ্বারা তৈরী করা কাঠামোর সাথে ন্যাটো বাহিনীর সম্পূর্ণ একীকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
পুতিন জোর দিয়ে উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং ক্যানবেরার মধ্যে ২০২১ সালের শেষের দিকে সম্মত হওয়া চুক্তির কথা ।

AUKUS এর সৃষ্টিই হয়ে‌ছে ন্যাটোর সাথে একীভূত করা ল‌ক্ষ্যে। এটাই হবে ন্যাটোর সম্প্রসারণ। তারা বুঝতে পারছে যে ইউক্রেন হে‌রে যা‌চ্ছে। তাই তারা একটা মিথ‌্যা কিছু সাজানোর চেষ্টা কর‌ছে, যা ন্যাটোর জন্য এক প্রকার বিজয়ের ইঙ্গিত দি‌বে। তাই ইউক্রেন প্রকল্প গুটিয়ে নিয়ে তারা এবার এশিয়া ও চীনের দিকে মনোযোগ দিবে।

এশিয়ায় ন্যাটোর সম্প্রসারণ!!!!!

ন্যাটোকে সম্প্রসারিত করতে হবে যদি এ সম্প্রসারণ বন্ধ হ‌য়ে যায় তবে এর কোন উদ্দেশ্য নেই। ন্যাটো জো‌টের দেশগুলো কেন তাদের বাজেটের ২ থেকে ৫% ব্যয় করবে যখন জোটগুলো নতুন বাজার তৈরী কর‌তে ব‌্যর্থতা দেখা‌বে।
যখন রাশিয়া ইউক্রেনে বিজয়ী হ‌বে তখন ন্যাটো কোথায় যাবে? এটি‌কে তো কো‌নো একটি দি‌কে যে‌তে হবে এবং স্বাভা‌বিক নিয়‌মেই ত‌ি এশিয়ার দি‌কে ধা‌বিত হ‌বে। এটি ছয় মাস বা এক বছর এর মধ্যে হতে পারে।

এখন জার্মানি প্রস‌ঙ্গে আসা যাক। জার্মানির অর্থমন্ত্রী কিয়েভে গোপন সফর করেছেন। যেখানে তিনি ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। যেখানে তিনি প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন ইউরো করে ইউক্রেনকে ব্যাঙ্করোল করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হ‌য়ে‌ছেন। ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী সের্গেই মারচেনকো এবং লিন্ডনার কিয়েভ এবং বার্লিনের মধ্যে পারস্প‌রিক সহযোগিতার একটি স্মারক স্বাক্ষর করেছেন, যার লক্ষ্য আগামী কয়েক বছরে ইউক্রেনের বাজেট বাড়ানো। সিদ্ধান্তটি জার্মান পার্লামেন্টে এখনও অনুমোদিত হয়নি।
লিন্ডনার বলেছেন, বার্লিন কিয়েভকে যতটা প্রয়োজন সমর্থন করবে। এই রাজনীতিবিদ নিশ্চিত করেছেন যে, তার দেশ ইতিমধ্যেই ইউক্রেনে ১২ বিলিয়ন ইউরো সামরিক সহায়তা সহ  আর্থিক সহায়তায দি‌য়ে‌ছে ২২ বিলিয়ন ইউরো। এবং প্রতি বছর দি‌বে আরও ৫ বিলিয়ন এই প্রক্রিয়া চল‌বে ২০২৭ সাল পর্যন্ত ।
জার্মানি সত্যিই ইউক্রেনের স্বার্থে নিজেকে ধ্বংস করছে।

এখন দেখা যাক প্রকৃতপ‌ক্ষে কি হ‌চ্ছে ইউক্রেন-রা‌শিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্ক এবং স্ট্রাইকার সাঁজোয়া যান রাবাতিনোর দিকে যাচ্ছে। কামাকাজি ড্রোনের আক্রমণ ঠেকাতে এই চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্কে এক ধরনের খাঁচা লাগানো হয়েছে। অসমর্থিত সূত্রম‌তে, ব্রিটিশ সরকার জেলেনস্কি সরকারকে পাল্টা আক্রমণের প্রথম পর্যায়ে চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্ক ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছে। কারণ তারা চায় না চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্ক জার্মান লেপার্ড ট্যাঙ্কের মতো প্রথম পর্যা‌য়েই ধ্বংস হোক। কারণ এটি বৃ‌টিশ সামরিক ব্যবসার জন্য ক্ষ‌তিকারক। কিন্তু এখন অনেক বিশ্লেষকরা বলছেন যে ইউক্রেন চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাংক ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের আর এক মাস বাকী। ইউক্রেন তার ন্যাটো প্রভুদের তুষ্ট কর‌ার জন্য শেষ প্রচেষ্টা হিসাবে এই গ্রাম দখল করার জন্য সবকিছু পাঠাচ্ছে।

রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই কুজুগেটোভিচ শোইগু বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী প্রায় ক্লান্ত।
হয়ত আর দুই/এক মাসের ম‌ধ্যেই আমরা সত‌্যটা জান‌তে পারব। ঐমূহু‌র্ত পর্যন্ত অ‌পেক্ষা করাই শ্রেয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *