ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর আইনগুলোর একটি: যুক্তরাষ্ট্র


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর আইনগুলোর অন্যতম বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গত সোমবার বেলা দুইটার দিকে পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে দুজন প্রবাসী বাংলাদেশি ও একজন বিদেশি সাংবাদিক প্রশ্ন করেন। এতে র‍্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠে আসে।

জার্মানির সম্প্রচারমাধ্যম ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা-নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে র‌্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, সে প্রশ্নও করা হয় ব্রিফিংয়ে। জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘মার্কিন সরকার নতুন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে কি না, সে বিষয়ে আমি সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না। তবে মোটের ওপর আমি এটুকু বলতে পারি, আমরা ডয়চে ভেলের তথ্যচিত্রে আসা অভিযোগ সতর্কতার সঙ্গে খতিয়ে দেখব। গত বৃহস্পতিবারও আমি এমনটাই বলেছি। আমাদের প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ সরকার একই কাজ করবে।’ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করার সময় এক সাংবাদিক বলেন, এই ব্রিফিং যখন চলছে, তখন একই ভবনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক চলছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন, তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি দেশটির ক্ষমতা বদলের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘ভণ্ডের দল ছাড়া আর কিছুই নয়।’ এ বিষয়ে প্যাটেলের মন্তব্য জানতে চান ওই সাংবাদিক।

ওই সাংবাদিক প্যাটেলকে আরও বলেন, আপনি খতিয়ে দেখার কথা বলছেন। আপনি নেত্র নিউজ ও ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন নিয়ে তদন্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার অন্যভাবে ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখছে। তারা বাংলাদেশ থেকে এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। তাই তারা অন্য উপায়ে খতিয়ে দেখছে। এ বিষয়ে প্যাটেলের মন্তব্য জানতে চান ওই সাংবাদিক।

ওই সাংবাদিক প্যাটেলকে আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাংলা দৈনিক প্রথম আলোয় আজ (সোমবার) একদল লোক নিরাপত্তা লঙ্ঘন করেছেন, তাঁরা সম্পাদকের ক্ষতি করতে চান। এ বিষয়েও প্যাটেলের মন্তব্য জানতে চান ওই সাংবাদিক।

এসব প্রশ্নের উত্তরে প্যাটেল বলেন, ‘আমাকে বিষয়টি দেখতে দিন। আমাকে চেষ্টা করতে দিন এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দিন।

প্রথমত, এটি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। দেখুন, সর্বশেষ বিশ্ব গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২। আগের বছরের তুলনায় অবস্থান ১০ ধাপ অবনমন হয়েছে। এর বড় কারণগুলোর একটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটা আপনি আগের প্রশ্নে বলেছেন। আমাদের বিবেচনায় এটি সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর আইনগুলোর একটি। এই আইন নিয়ে আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার যেকোনো জাতি ও তার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য জরুরি। গণমাধ্যম ও খবরের ওপর বিধিনিষেধ এবং এর প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

প্যাটেল আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তরে আমি যাচ্ছি না। এ নিয়ে আমার কোনো নতুন বা আলাদা মন্তব্য নেই। আমি আবার বলব, যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে জবাবদিহি করতে হবে এবং আমাদের প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ সরকার এই তথ্যচিত্র ও ভিডিওর বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।’

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন আগামী নির্বাচন চায়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল তাদের অবস্থানে অনড়। ক্ষমতাসীন দল বর্তমান সংবিধানের অধীন নির্বাচন করতে চায়। সংবিধান অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কেমন হবে, এমন প্রশ্ন করা হয় প্যাটেলকে।

উত্তরে প্যাটেল বলেন, ‘আমাকে দুটি বিষয় বলতে দিন। প্রথমত, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাই। এ কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের বৈঠক চলছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে এবং বিশ্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নীতিকে সমর্থন করে। তবে আমি এখানে একজন রাজনৈতিক প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল বনাম অন্যকে সমর্থন করতে আসিনি। সামগ্রিকভাবে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করার অপেক্ষায় রয়েছি।’

বৈঠকের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্যাটেল বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হবে। এর আগে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চান না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *