বাল‌্যবন্ধু মাহবু‌বের পোষ্ট থে‌কে অনুকৃতঃ

এম,এ হক

আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক সমালোচনা দেশে-বিদেশে অনেকের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল তৈরী করেছে।

র‍্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আর নির্বাচন ঘিরে চাপ- এই দুটা বিষয় মূলত বাংলাদেশ সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

তবে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশ কোনো একটি দিকে না ঝুঁকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য স্থাপনের যে লড়াই চলছে তাতে কোনো দিকে এককভাবে অবস্থান নিতে চাইছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নিয়ে টানাটানি চলছে। আর বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নীতি নিয়ে যে কাজ করছে তারই অংশ হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মার্কিন ‘চাপের’ মুখে আছে বাংলাদেশ। 

যতদুর বোঝা গেল খেলাটা ভারতই খেলে দিয়েছে এবং এদেশের তিনটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলই খেলার পন হয়েছে।

এ খেলার পরিকল্পনা করা হয় প্রায় বছর খানেক আগে সম্ভবত চাইনিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ ভিজিটের পর। তখন চীন তাইওয়ান উত্তেজনা চলছে। চাইনিজরা বিভিন্ন দেশের সমর্থন জোগাড় করছে।শেখ হাসিনার সাথে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের পর আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে বিশ্বাসী। এ ঘোষণা স্পষ্টতই বাংলাদেশের চাইনিজ বলয়ে প্রবেশের ইংগিত ছিল।

মোদি শেখ হাসিনাকে প্রেশারাইজ করলে তা কাজে আসতো না। কারণ আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে যে দুটো রাজনৈতিক দল আছে তারা ঘোর ভারত বিরোধী। শেখ হাসিনা তা ভাল করেই জানে। তাই খেলাটি আমেরিকাকে দিয়েই খেলাতে হবে।

শুরু থেকেই সন্দেহ হচ্ছিল কারণ হাসিনা রিজিমকে সরানোর প্রচেষ্টায় আমেরিকার তেমন জোর পরিলক্ষিত হচ্ছিলো না। তবে শেখ হাসিনা এবার সত্যি সত্যি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।

মোদি হাসিনাকে সরকার বাচাতে আমেরিকার কাছে পাঠিয়েছে। জাপানের কাছে পাঠিয়েছে। শেষমেশ চায়না ও রাশিয়ার কাছ থেকেও ভরসার কোন আশ্বাস না পাওয়ায় মোদির কাছেই ফিরতে হয়েছে। চাইনিজদের সাথে সখ্যতার ইতি ঘটানো, চীনপন্থী কর্মকর্তাদের সরকার ও প্রশাসন থেকে ছাটাই করা সহ নানাবিধ শর্ত মেনে আপাতত সরকার বাচিয়ে ফেলেছে তারা। তবে চীন ও রাশিয়া এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে। এদেশে তাদের বিশাল বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে।

হাসিনা সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার যোগ্যতা রাখতো তাহলে তাদের এতটা মুশকিলে পড়তে হতোনা। কিন্তু কি আর করা? অত্যাচারী, খুনী, লুটেরা ভিলেনের করুন পরিণতি না দেখলে মানুষের মন ভরেনা। ছবি হিট হয়না।

চাইনিজদের পলিসি হচ্ছে তাদের দেয়া ঋণের টাকায় উন্নয়ন করে জনপ্রিয়তা সরকারকেই অর্জন করতে হবে। ঋণের অর্থ দেশের বাইরে পাচার করলে তারা হিসেব চাইবেনা কিন্তু এর দায়ও নেবেনা।

হাসিনা সরকার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের বদলে চীনকে বেছে নিয়েছিল এই হিসেব না চাওয়ার কারণেই। কিন্তু তা ধরে রাখা সম্ভব হলোনা।

তবে এই টানাপোড়েনে বিএনপি লাভবান না হলেও জামায়াত লাভবান হয়েছে। দশ বছর পর তারা মাঠের শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে। দেশের মানুষ যেখানে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই ভেবে হতাশায় ডুবে ছিল তা কেটে গেছে। এ খেলায় শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হয়েছে তা এটাই।

শেখ হাসিনা ভাল করেই জানেন এক দূর্ণীতিবাজকে সরিয়ে অন্য দূর্ণীতিবাজকে ক্ষমতায় বসাতে মানুষ অযথা ঘর থেকে বেরুবে না।

আমেরিকা এশিয়ায় চাইনিজদের একঘরে করতে চায়। এ পরিকল্পনার সার্কভুক্ত অঞ্চলের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে মোদিকে। বিএনপি মোদিকে অনেকভাবে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছে। কারণ চাইনিজদের সাথে বিএনপির সাপে নেউলে সম্পর্ক। জিয়াউর রহমান কর্ণেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানো সহ সমগ্র মাওবাদী গোষ্ঠীর শেকড় উপড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ভারত তার ঔরসজাত সন্তান আওয়ামী লীগের উপরই ভরসা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধি বাম। হাসিনাকে অন্তত আরও দু বছর সহ্য করতে হবে এদেশের মানুষকে। কারণ এখনো সময় আসেনি। সময়ের আগে কিছু করাও সম্ভব নয়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *