গ্যাবনে সেনা অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট গৃহবন্দী


মধ্য আফ্রিকার তেল সমৃদ্ধ দেশ গ্যাবনের ক্ষমতা দখলে নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বুধবার ক্ষমতা দখলের পর সামরিক কর্মকর্তারা দেশটির প্রেসিডেন্ট আলী বোঙ্গোকে গৃহবন্দী করেছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আলী। খবর রয়টার্সের।

রাতারাতি টেলিভিশন ঘোষণায় এক ডজন সিনিয়র অফিসার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল, সীমান্ত বন্ধ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। পাশাপাশি তারা গ্যাবনের সমস্ত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করে।

টেলিভিশনের প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, রাতারাতি ঘোষণার পর সকালে উদযাপন করতে শত শত মানুষ রাজধানী লিব্রেভিলের রাস্তায় নেমে আসে। ভিডিওটি রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ থেকে ধারণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাতীয় টেলিভিশনে পড়া অন্য একটি বিবৃতিতে সামরিক কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা আলী বোঙ্গোকে আটক করেছেন। ২০০৯ সালে তার বাবা ওমরের কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। ওমর ১৯৬৭ সাল থেকে গ্যাবন শাসন করে আসছিলেন। বিরোধীরা বলছেন, পরিবারটি রাষ্ট্রের তেল এবং খনিজ সম্পদ দেশটির প্রায় ২৩ লাখ মানুষকে খুব কমই ভোগ করতে দিয়েছে।

গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট আলী বঙ্গো। ছবি: সিনহুয়া

রয়টার্স জানিয়েছে, এই অভ্যুত্থান সফল হলে ২০২০ সাল থেকে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় এটি হবে অষ্টম অভ্যুত্থান। সর্বশেষ অভ্যুত্থানটি জুলাই মাসে নাইজারে হয়েছিল। আফ্রিকা অঞ্চলের সামরিক কর্মকর্তারা মালি, গিনি, বুরকিনা ফাসো এবং চাদেও ক্ষমতা দখল করেছে।

গ্যাবনের সামরিক কর্মকর্তারা নিজেদেরকে দ্য কমিটি অব ট্রানজিশন অ্যান্ড দ্য রিস্টোরেশন অব ইনস্টিটিউশন বলে অভিহিত করে বলেছেন, গ্যাবন একটি গুরুতর প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২৬ আগস্টের নির্বাচন স্বচ্ছ বা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।

আলী বোঙ্গোকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঘোষণা দেওয়ার পরে লিব্রেভিলেতে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। কিন্তু উদযাপন শুরু হওয়ার আগে রাস্তাগুলো অনেকটাই শান্ত ছিল। পরে পুলিশ অফিসাররা শহরের প্রধান মোড়ে পাহাড়া দিতে বেরিয়ে পড়ে।গ্যাবন সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ৬৪ বছর বয়সী আলী বোঙ্গোকে শেষবার দেখা গেছে শনিবার, ভোট দেওয়ার সময়। ২০১৯ সালে স্ট্রোক করার পর তিনি নির্বাচনের আগে জনসমক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন।গ্যাবনের সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছেন।অভ্যুত্থানের কারণে এই অঞ্চলে ফ্রান্সের উপস্থিতির জন্য আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গ্যাবনে দেশটির প্রায় ৩৫০ সৈন্য রয়েছে। সেখানে অভ্যুত্থানের পর ফরাসি বাহিনীকে মালি এবং বুরকিনা ফাসো থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। নাইজারের অভ্যুত্থানের নেতারাও ফ্রান্সের সঙ্গে সামরিক চুক্তি প্রত্যাহার করেছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গ্যাবনের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে, এপ্রিলে চীন সফরকারী আলী বঙ্গোর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বলেছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং স্থিতিশীলতার আশা করছে।গ্যাবনের পরিস্থিতি নিয়ে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ফ্রাঁসোয়া কনরাডি লিখেছেন, ‘আমরা মনে করি সৈন্যরা ক্ষমতায় বসতে চাইবে এবং একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য জাতীয় সংলাপ স্থাপন করতে চাইবে, যখন তারা (বঙ্গোর) অনুগতদের আমলাতন্ত্র থেকে মুক্তি দেবে।’বঙ্গোর সমালোচকরা বলছেন, পরিবারটি গ্যাবনের তেল এবং অন্যান্য সম্পদকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। বিপুল সম্পদ থাকার পরেও দেশটির জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে।গ্যাবন প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের টোটাল এনার্জি এবং অ্যাংলো-ফরাসি প্রযোজক পেরেনকো।

সুত্রঃ ইত্তেফাক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *