গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণিমায় আত্মহত্যা বেশি


যুক্তরাষ্ট্রে সাত শতাধিক আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, পূর্ণিমায় বা পূর্ণিমার কাছাকাছি সময়ে আত্মহত্যা বেড়ে যায়। এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মনোরোগবিজ্ঞানের গবেষকেরা।

গবেষকেরা দেখেছেন, যাঁরা মদ্য পান করেন, যাঁরা বিষণ্নতায় ভোগেন, পূর্ণিমার সময় তাঁদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায় ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে। গবেষকেরা এ–ও বলছেন, এসব আত্মহত্যা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে সেপ্টেম্বরে।

তাঁদের গবেষণা প্রবন্ধ ৩ এপ্রিল চিকিৎসা সাময়িকী ডিসকভার মেন্টাল হেলথ–এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সময়টি যেহেতু শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, সুতরাং পূর্ণিমার সময় আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিবিড় তত্ত্বাবধান করা উচিত।

কী জানলেন গবেষকেরা

গবেষকেরা ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মারিওন কাউন্টির অপঘাতজনিত বা সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনা তদন্তকারী কার্যালয়ের তথ্য নিয়েছেন। ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ওই এলাকায় ঘটে যাওয়া সব আত্মহত্যার তথ্য তাঁরা যাচাই ও বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা ওই চার বছরে মোট ৭৭৬টি আত্মহত্যার ঘটনা দেখেছেন। এতে দেখা গেছে, পূর্ণিমা ও এর আশপাশের সময় আত্মহত্যার ঘটনা বছরের বাকি সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ১৯ গুণ বেশি। পূর্ণিমা ছাড়া ২ হাজার ৬ দিনে যেখানে ৫৬৬টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে পূর্ণিমা ও এর আশপাশের ৬২৬ দিনে ২১০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, ৫৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।

যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের জিন বিশ্লেষণ করেও গবেষকেরা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। এ ক্ষেত্রে সহায়তা নিয়েছেন ইন্ডিয়ানা সেন্টার ফর বায়োমার্কার রিসার্চ ইন নিউরোসাইকিয়াট্রি নামের প্রতিষ্ঠানের। এ পর্যায়ে গবেষকেরা ৪৫ জনের রক্তের নমুনা বিশ্লেষণের তথ্য পেয়েছিলেন। তাঁদের জিনগত বৈশিষ্ট্য জানার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা।

গবেষকেরা বলছেন, মদ্যপানে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি যাঁদের আছে অথবা যাঁরা বিষণ্নতায় ভোগেন, তাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। আর পূর্ণিমার সময়ে আত্মহত্যার সঙ্গে ঘরের বাইরের আলোর একটি সম্পর্ক থাকতে পারে। মানুষের শরীর অনেকটি ঘড়ির মতো যাকে ‘সার্কেডিয়ান ক্লক’ বলা হয়। এই সার্কেডিয়ান ক্লক দিন ও রাত অর্থাৎ আলো ও অন্ধকারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি ছন্দের মতো। পূর্ণিমার আলো সেই ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায়। এই ছন্দপতন কারও কারও আত্মহত্যার পেছনের কারণ কি না, তা নিয়ে আরও বড় গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেছেন গবেষকেরা।

তবে সেপ্টেম্বরের পূর্ণিমায় কেন আত্মহত্যা বেশি? এই সময় অনেক মানুষের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হয়, মানুষের কাজের চাপের মধ্যে পড়ে। এটাও কারণ হতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, এসব বিষয়ে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা হওয়া দরকার।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *