ইসরাইলের হামলায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১৬৬ ফিলিস্তিনি


গাজা

অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের বোমাবর্ষণ দিন-রাতজুড়েই অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলের হামলার ২৮তম দিনে ১৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে খান ইউনিসে বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ফিলিস্তিনের টিভি সাংবাদিক মোহাম্মদ আবু হাতাবসহ তার পরিবারের ১২ সদস্য। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা ঘিরে ফেলার ঘোষণা দিলেও হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেড বলেছে, গাজা হবে ইসরাইলের সেনাদের জন্য অভিশপ্ত স্থান। এখান থেকে তাদের কালো ব্যাগেই বাড়ি ফিরতে হবে। সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলছে। এদিকে হামলার তীব্রতা কমাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন তৃতীয়বারের মতো শুক্রবার ইসরাইল সফর করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আর গাজার পরিস্থিতিকে ইসরাইলের বোকামির প্রমাণ বলে উল্লেখ করেছেন লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। তিনি বলেছেন, এ যুদ্ধের পরিণতি হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। খবর আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, স্কাই নিউজের। 

ইসরাইলের বিমানবাহিনী আল-শিফা হাসপাতাল থেকে ১ কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত গাজার আল-নাসের এলাকার আশপাশের বাড়ি লক্ষ্য নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করেছে। এছাড়াও, তাল আল-হাওয়ার আশপাশে আল-কুদস হাসপাতালের আশপাশে পরিচালিত নতুন বিমান হামলায় ২০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। এএফপি এবং অন্যান্য মিডিয়ার অফিস অবস্থিত এমন একটি টাওয়ারেও বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। সেখানে অবস্থানকারী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন দিক থেকে গাজা শহরের আকাশে শুধু ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তারা বলছেন, আমরা গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকায় বেইত হানুন এবং বিত লাহিয়াতেও সংঘর্ষের কথা শুনতে পাচ্ছি। ইসরাইলের বাহিনী বলছে, হামাসের বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়ে তারা সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা অভিযানে তাদের আরও চার সেনা নিহত হয়েছে। এ নিয়ে স্থল অভিযান শুরুর পর নিহত সেনার সংখ্যা ২৩ জনে দাঁড়াল।

ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৯২২৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে যুগান্তরকে পাঠানো বিবৃতিতে জানিয়েছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়েছে নিহতের মধ্যে ৩৮২৬টি শিশু ও ২৪০৫ জন নারী রয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ৩২ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেন, ১২০০ শিশু এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। 

এদিকে জাতিসংঘের অন্তত ৫০টি ভবন ও সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তা দানকারী জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (আনরোয়া) শুক্রবার এক টুইটবার্তা নিশ্চিত করেছে। আনরোয়া জানিয়েছে, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এসব ভবন মূলত জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন স্কুল ও শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্র। বর্তমানে আনরোয়া পরিচালিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি।

এদিকে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গাজা উপত্যকার গাজা সিটি ঘিরে ফেলেছে সেনাবাহিনী। এখন গাজা সিটিতে ইসরাইলি বাহিনীর চূড়ান্ত অভিযান চালানোর বিষয়টি সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়ার পরই হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, ‘তোমাদের সেনারা কালো ব্যাগে করে ফিরবে।’ এক টেলিভিশন ভাষণে উবাইদা বলেন, গাজায় ইসরাইলি সেনা নিহতের যে সংখ্যা সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। গাজার বিভিন্ন এলাকাতে সেনাদের প্রতিহত করতে লড়াই অব্যাহত রেখেছেন হামাসের যোদ্ধারা।

শুক্রবার তৃতীয়বারের মতো ইসরাইলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারোজের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র শক্তভাবে অবস্থান করছে। আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলের রয়েছে। তিনি বলেন, ৭ অক্টোবরের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ব্লিংকেন বলেন, সেই সঙ্গে বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। তাদের রক্ষায় সম্ভাব্য সব চেষ্টাই চালাতে হবে। 

ইসরাইলে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনাকে ‘দারুণ ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ  প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। শুক্রবার প্রথমবারের মতো হামাস ও ইসরাইলের চলমান যুদ্ধ নিয়ে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন। হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ওই অভিযানের ঘটনা ছিল সত্যি দারুণ। ১০০% ফিলিস্তিনিরাই ওই অভিযান চালিয়েছে। ওই অভিযানের কোনো নেতিবাচক দিক নেই। হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরাইল সেখানে শিশু ও নারীদের হত্যা করছে। তারা সেখানে নৃশংসতার পর নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ যুদ্ধের পরিণতি হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। গাজায় যা ঘটছে সেটাকে তিনি ইসরাইলের কুকর্মের প্রদর্শন বলে উল্লেখ করেন। পূর্বে ধারণ করা হাসান নাসরুল্লাহর এ বক্তব্য বাগদাদসহ ওই অঞ্চলে সর্বত্র প্রচারিত হয়। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হলেও এ নিয়ে শুক্রবারের আগে পর্যন্ত তিনি কোনো বক্তব্য দেননি। ইসরাইলের বিক্ষিপ্ত হামলায় তাদের ৫০ জনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এদিকে আইডিএফ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানিয়েছেন, হাসান নাসরুল্লাহর বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল থেকেই লেবানন সীমান্তে অতি সতর্কতায় রয়েছে সেনারা।

হিজবুল্লাহর হাতে আসছে ওয়াগনারের ক্ষেপণাস্ত্র : হামাসের পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হিজবুল্লাহকে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, ওয়াগনার গ্রুপ হিজবুল্লাহকে উন্নত এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম (ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা) দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বিষয়ে রাশিয়া বা হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, ‘এসএ-২২’ এখনো লেবাননে পাঠানো হয়নি। কিন্তু হিজবুল্লাহ এবং ওয়াগনারের কয়েকজন সদস্য এ বিষয়ে আলোচনা করতে বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *