ইরাক-সিরিয়ায় ইরান-তুরস্কের ভয়াবহ হামলা, মধ্যপ্রাচ্য যেন ফুটন্ত কড়াই


ইরাক-সিরিয়ায় ইরান-তুরস্কের ভয়াবহ হামলা, মধ্যপ্রাচ্য যেন ফুটন্ত কড়াই

বুলেট-ক্ষেপণাস্ত্র আর বোমা-বারুদের উত্তাপে টগবগ করে ফুটছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য। গত বছর গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলার মধ্যদিয়েই মূলত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও। ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, ইয়েমেন- সবাই এখন একই কাতারে। একে একে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। থেমে থেমেই হঠাৎ হঠাৎ বোমার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে দেশগুলো। আক্রমণ-পালটা আক্রমণে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মরুভূমি। কোথাও জ্বলছে আগুনের শিখা। কোনো শহর আবার পরিণত হচ্ছে মৃত্যুপুরীতে। গোলা-বারুদে পোড়া বিশৃঙ্খল মধ্যপ্রাচ্য যেন এক ফুটন্ত কড়াই। যার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিশ্বে। রয়টার্স, আলজাজিরা। 

গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে বড় সংঘাত ছড়িয়ে পড়া আশঙ্কার মধ্যেই ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) মঙ্গলবার ভোরে ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছে। এর আগের দিন তুরস্কের সেনাবাহিনীও উত্তর ইরাক ও সিরিয়ায় কুর্দি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা সোমবার একটি মার্কিন মালিকানাধীন পণ্যবাহী জাহাজকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, আইআরজিসি বলেছে, সাম্প্রতিক ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর নৃশংসতার প্রতিক্রিয়ায় ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে মোসাদের প্রধান গুপ্তচরবৃত্তির সদর দপ্তর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলের রাজধানী ইরবিলে অন্তত আটটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, তিনটি স্থান থেকে দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। 

আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, হামলায় চারজন নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছে। আরও বলেছে, আমরা আমাদের জাতিকে আশ্বস্ত করছি, শহিদদের রক্তের শেষবিন্দুর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আক্রমণাত্মক অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইরাকের কুর্দি প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানি ইরবিলে হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন। এটিকে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং এর জনগণের নিরাপত্তার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। ইরাকের পাশাপাশি সিরিয়ায়ও হামলা চালিয়েছে ইরান। আইআরজিসি বলেছে, এটি সিরিয়ায় ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অপরাধীদের, বিশেষ করে আইএসআইএলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আইএসআইএল চলতি মাসের শুরুতে ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব শহর কেরমানে জোড়া বোমা হামলা চালিয়েছিল। যাতে প্রায় ১০০ জন নিহত হয়। যার জের ধরেই ইরান পালটা হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া এবং অন্যান্য সূত্র সোমবার বলেছে, তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত উত্তর-পূর্বে বিদ্যুৎ এবং তেলের অবকাঠামোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। বেশ কয়েকটি পাওয়ার স্টেশনের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। গাজা নিয়ে আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রভাব অব্যাহত থাকায় হামলা তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে। তুরস্ক সিরিয়ায় কুর্দিশ পিপলস ডিফেন্স ইউনিট (ওয়াইপিজি)-এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সামরিক অনুপ্রবেশ এবং বোমা হামলা চালিয়েছে। তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, সোমবার (স্থানীয় সময়) রাতভর হামলায় ২৩টি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস হয়েছে। এই অভিযানটি তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্তজুড়ে সহিংসতার সা¤প্রতিক বৃদ্ধিকে প্রসারিত করেছে। শুক্রবার উত্তর ইরাকে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) যোদ্ধাদের সাথে সংঘর্ষে নয়জন তুর্কি সেনা নিহত হওয়ার পর সংঘর্ষের উত্থান শুরু হয়।  এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের হামলার প্রতিশোধে সোমবার মার্কিন মালিকানাধীন পণ্যবাহী এক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। হুথি সামরিক বাহিনী এবং ইয়েমেনের একটি সরকারি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, এডেন উপসাগরে একটি আমেরিকান জাহাজকে লক্ষ্য করে বিদ্রোহীরা তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। শুক্রবার হুথিদের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে পশ্চিমা হামলার পর হুথিরা বলেছিল তারা থেমে থাকবে না। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *