ইউরোপে উদ্বাস্তু বাংলাদেশী


মাইনুল ইসলাম নাসিম

মাইনুল ইসলাম নাসিমঃ ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবৈধ অনুপ্রবেশের পর উদ্বাস্তু হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশিরা মূলত ইতালি এবং ফ্রান্সকেই বেছে নিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান ব্যুরো ইউরোস্টাট জানাচ্ছে ২০২২ সালে ইতালিতে এসাইলাম কেইস করা নন-ইইউ দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে বাংলাদেশিরা (১৪ হাজার ৫৯০)। বাংলাদেশের পরের ৪ দেশ পাকিস্তান (১১ হাজার ৩৭০), মিশর (৮ হাজার ৮৩৫), তিউনিসিয়া (৫ হাজার ৩৬৫) এবং জর্জিয়া (৩ হাজার ২৪০)। ইতালিতে অন্যসব দেশ মিলে ৩৩ হাজার ৮০৫। প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্সে ২০২২ সালে আশ্রয় প্রার্থী নন-ইইউ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষস্থান দখল করতে না পারলেও ২য় স্থানে আছে। ফ্রান্সে গত বছর ২২ হাজার ৫৮৫ জন আফগান আশ্রয় প্রার্থনা করে, তালিকায় যার পরেই আছে ১০ হাজার ৫৫৫ জন বাংলাদেশি। পরের ৩ অবস্থানে তুরস্ক (১০ হাজার ৫), জর্জিয়া (৮ হাজার ৯০৫) এবং কঙ্গো (৬ হাজার ৭৬০)। ফ্রান্সে অন্যসব দেশ মিলে ৭৮ হাজার ৬৯৫। ইতালি ও ফ্রান্সের বাইরে বাংলাদেশের নাগরিকরা রোমানিয়ায় ১ হাজার ৩৬০, স্লোভেনিয়ায় ৮২৫, মাল্টায় ৭৫ এবং স্লোভাকিয়ায় ৫৫ জন আশ্রয় প্রার্থনা করে।

ইউরোস্টাট পরিসংখ্যানে ২০২১ এবং ২০২২ দুই বছরে সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় প্রার্থনা করা নন-ইইউ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে ৭ম স্থানে। বাংলাদেশের আগে ১ থেকে ৬ নাম্বার দেশ যথাক্রমে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনিজুয়েলা, তুরস্ক, কলম্বিয়া ও পাকিস্তান। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের স্থান এই তালিকায় বাংলাদেশের পরে। নন-ইইউ সব দেশ মিলিয়ে শুধুমাত্র ২০২২ সালে ৯ লাখ ৬২ হাজার ১৬০ জনের আবেদন জমা হয় ইইউ ভুক্ত সকল দেশ। এর মধ্যে আবেদন গৃহীত হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৪৫ জনের। কেইস এক্সেপ্ট যাদের হয়েছে তাদের ৪৪% পলিটিক্যাল এসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়), ৩১% সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন (সহায়ক আশ্রয়) এবং ২৫% হিউম্যানিটারিয়ান প্রটেকশন (মানবিক আশ্রয়)। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আশ্রয়প্রাপ্ত উদ্বাস্তুদের দেশের তালিকার প্রথম দশে নেই বাংলাদেশের নাম। প্রথম ১০ দেশ যথাক্রমে সিরিয়া (১ লাখ ৯ হাজার ৮১৫), আফগানিস্তান (৮৭ হাজার ৫৩০), ভেনিজুয়েলা (২২ হাজার ৩৫০), ইরাক (১৩ হাজার ৩৫), সোমালিয়া (১১ হাজার ৭৪০), তুরস্ক (১০ হাজার ৭৫০), ইউক্রেন (৯ হাজার ৪৪৫), নাইজেরিয়া (৯ হাজার ৪১৫), মালি (৮ হাজার ৫৬০) এবং ইরিত্রিয়া (৮ হাজার ১৪৫)।

জার্মানিতে সবচাইতে বেশি আবেদন মঞ্জুর হয়েছে উদ্বাস্তু হিসেবে ২০২২ সালে। ইউরোস্টাটের হিসেবের খাতায় এই সংখ্যাটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৬৫, যা ইইউ’র সকল দেশে মোট আশ্রয়প্রাপ্ত উদ্বাস্তুের ৪১%। জার্মানির পরের তিনটি দেশ হচ্ছে ফ্রান্স (৪৯ হাজার ৯৯০), ইতালি (৩৯ হাজার ৬৬০) ও স্পেন (৩৫ হাজার ৭৬৫)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইতালি ও ফ্রান্সে ২০২১ ও ২০২২ সালে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় আবেদন করা অধিকাংশ বাংলাদেশির কেইস ঝুলে আছে চরম অনিশ্চিত অবস্থায়। একটা বড় অংশের আবেদন ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত (রিজেক্ট) হয়েছে। এর নেপথ্যে যে বিষয়গুলো কাজ করছে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ইউরোপীয় প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত কিংবা দুর্ভিক্ষপীড়িত কোন রাষ্ট্র নয়। কারণ হিসেবে আরও যোগ হয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট কেলেংকারি অর্থাৎ বয়স কম দেখিয়ে নিজেদেরকে অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবি করে আন্ডার এইজ কিন্ডার (বাম্বিনো) কেইস করার পর তার সাথে মিল রেখে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে চাহিদা মাফিক নতুন পাসপোর্ট পেতে বিড়ম্বনা। সবমিলিয়ে খুব একটা ভালো নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু হতে আগ্রহী তথা আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশের নাগরিকরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *