আর্সেনালকে রুখে দিয়ে সিটির সুবিধা করে দিল লিভারপুল
লিভারপুলের খুব বেশি পাওয়ার ছিল না এ ম্যাচ থেকে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চার-এ থেকে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার আশা শেষই হয়ে গেছে তাদের। অ্যানফিল্ডে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যদের কুড়িয়ে নেওয়ার যা কিছু অবশিষ্ট ছিল সেটি হচ্ছে এক দশক ধরে নিজেদের মাঠে আর্সেনালের বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা অক্ষুণ্ন রাখা। আজ সেটি দারুণভাবেই করতে পেরেছে লিভারপুল। আর্সেনালের সঙ্গে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ে ২-২ গোলে ড্র করে নিজেদের কাজটা ঠিকই করতে পেরেছে তারা।
আর্সেনাল অনেক লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিল। ২০১২-১৩ মৌসুমের পর অ্যানফিল্ডে অধরা জয়টা তো ছিলই। লিগের পয়েন্ট তালিকায় ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা দলটি আজ জিতে নিজেদের অগ্রগামিতাকে আরও বাড়িয়ে নিতে পারত। কিন্তু সেটি হয়নি। লিভারপুলের সঙ্গে ড্র করে ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ম্যানচেস্টার সিটিকে কাছে ঘেঁষার সুযোগটাই করে দিয়েছে গানাররা।
শনিবার ম্যানচেস্টার সিটি সাউদাম্পটনকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে। এখন শীর্ষ দুই দলের মাঝে পয়েন্টের ব্যবধান মাত্র ৬। অথচ আর্সেনাল আজকের ম্যাচটি জিতলেই এই ব্যবধান দাঁড়াত ৮-এ। এখন আর্সেনালের জন্য চিন্তার বিষয়টা হলো সিটির এক ম্যাচ কম খেলা আর এ মৌসুমে সিটি বিপক্ষেই আরও একটি লড়াই বাকি থাকা। ২০০৪ সালের পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতার যে স্বপ্ন আর্সেনাল দেখছে, তাতে বাদ সাধার সব রসদই এখন পেপ গার্দিওলার দলের হাতে রয়ে যাচ্ছে।
ম্যাচটা পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়েই শুরু করেছিল আর্সেনাল। ৮ মিনিটের মাথায় গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি গোল করে আর্সেনালকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন। মার্টিন ওডেগার্ড পাস বাড়িয়েছিলেন বুকায়ো সাকাকে। লিভারপুল ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক বাধা দিলেও বল তাঁর পায়ে লেগে চলে যায় মার্তিনেল্লির কাছে। গোলকিপার আলিসন বেকারকে বোকা বানাতে ভুল হয়নি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের। ১৬ মিনিটের মাথায় আর্সেনাল আরও এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু সাকার পাস থেকে গ্যাব্রিয়েল জেসুস সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর সুযোগ আসে লিভারপুলের। কিন্তু ফাবিনিও আর্সেনালের বক্সে মোটামুটি ফাঁকায় অ্যান্ডি রবার্টসনের দিকে বল বাড়ালেও সে সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। তবে ৪২ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহ গোল করে ম্যাচ জমিয়ে দেন (২-১)।
আরও পড়ুন৬ ম্যাচে ২২ গোল খাওয়া ‘জঙ্গলে’র ভয় পাচ্ছে আর্সেনাল
আর্সেনাল ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায়। তবে বিরতির আগ মুহূর্তে মার্তিনেল্লি ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আরনল্ডকে বোকা বানিয়ে বক্সের মধ্যে ক্রস ফেললে তা থেকে হেডে গোল করেন তাঁর সতীর্থ ব্রাজিলিয়ান জেসুস।
ম্যাচের বিরতির সময় বিতর্কিত এক ঘটনায় উত্তাপ ছড়ায় অ্যানফিল্ডে। লিভারপুলের স্কটিশ ফুটবলার অ্যান্ডি রবার্টসন অভিযোগ করেন ম্যাচের লাইনসম্যান তাঁকে কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়েছেন। অভিযোগটি প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে বলে জানিয়েছে।
বিরতির পর লিভারপুল খেলা শুরু করে জর্ডান হেন্ডারসনের মিস দিয়ে। তবে ম্যাচের আসল নাটকটা শুরু হয় এই অর্ধেই। ডিয়েগো জোতাকে আর্সেনালের ডিফেন্ডার রব হোল্ডিং বক্সের মধ্যে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় লিভারপুল। কিন্তু পেনাল্টিটি বাইরে মারেন লিভারপুলের মিসরীয় তারকা। এরপর লিভারপুল একের পর এক আক্রমণ করে গেছে, গোলের খুব কাছে পৌঁছেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। সালাহর একটি শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন আর্সেনাল গোলকিপার রামসডেল। ৯ মিনিট পর নুনিয়েজের একটি শটও কোনোমতে বাঁচান তিনি। শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেন বিদায়ী তারকা রবার্তো ফিরমিনো। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার আরনল্ডের ক্রস থেকে হেডে গোল করে অ্যানফিল্ডকে আনন্দে ভাসান ব্রাজিলিয়ান তারকা। ২-২ হওয়ার পরেও সুযোগ এসেছিল লিভারপুলের। সালাহর আরও একটি শট গোলে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে শরীর শূন্যে ভাসিয়ে রক্ষা করেন রামসডেল।
তবে এ ম্যাচে ড্র করলেও আক্ষেপ থেকেই যাবে লিভারপুলের। গত মাসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৭-০ গোলে হারানোর পর লিগের একটি ম্যাচও জিততে পারেনি লিভারপুল। শীর্ষ চার তাদের কাছে এই মুহূর্তে অনেক দূরের বিষয়ই। প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ স্থানে অবস্থান করা টটেনহামের চেয়ে এখনো ১২ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে লিভারপুল।