জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

আধুনিক বিশ্বের দাপটে ‘আদিম যুগে’ গাজা


আধুনিক

যুদ্ধ শুরুর আগে গাজার বাসিন্দা মাহমুদ আল-দাউদি (৩৩) কখনোই কল্পনা করতে পারেননি, তার দোকানে ধুলো পড়া রেডিও সেটগুলোর এত বেশি চাহিদা থাকবে। বাইরের বিশ্বের খবর রাখতে আবারও একটি মূল্যবান মাধ্যম হয়ে উঠবে! কারণ ডিজিটাল যুগের বাজারে এটি একেবারে বিলুপ্তির পথে। অনেক দেশে কালক্রমে হারিয়ে যাওয়া এ মাধ্যমের প্রচলন একেবারেই নেই। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নতুন করে আবার সেই রেডিওরই প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। ইসরাইলি হামলার খবর শুনতে ঘরে ঘরে বাজছে রেডিও। বাড়ির উঠোনে বসে, দোকানে বসে, যে যেভাবে পারছেন শুনছেন যুদ্ধের বার্তা। আল মনিটর, এএফপি, আল-আরাবিয়া।

৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলা দিন দিন নৃশংস হয়ে উঠছে। গাজা ধ্বংসে সভ্যতাখেকো সব ভয়ংকর অস্ত্র-সরঞ্জাম ব্যবহার করছে সেনারা। অত্যাধুনিক বোমাসহ পলকে দিগন্ত ছুঁয়ে ফেলা ফাইটার জেট, অ্যান্টি মিসাইল ট্যাংক-কোনো কিছুই বাদ রাখছে না। আধুনিক বিশ্বের সর্বাধুনিক সব যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে গাজা।  আক্রমণের সেসব খবর পেতেই হারানো দিনের সেই রেডিওকেই আবার ঘরে তুলেছেন বাসিন্দারা। ব্যাঙ্গাÍক সুরে বললে, আধুনিক বিশ্বের দাপটে রীতিমতো আদিম যুগে ফিরে গেছে যুদ্ধপীড়িত অসহায় গাজাবাসী। সরল কণ্ঠে ঠিক এই কথাটিই বলেছেন গাজার আরেক বাসিন্দা হাসুনা (৭৫)- ‘আধুনিক প্রযুক্তিতে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।’

হামলা শুরুর পর থেকেই গাজায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার পর থেকে অবরুদ্ধ অঞ্চলের ২৩ লাখ মানুষ দীর্ঘ ব্ল্যাকআউট সহ্য করছে। বিধ্বস্ত শহরে টেলিভিশন অথবা কম্পিউটারের ব্যবহার একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ রাখছে ইসরাইল। অচল হয়ে পড়েছে মোবাইল যোগাযোগ। দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ব্যাটারিচালিত রেডিওই এখন শেষ ভরসা। দাউদি বলেছেন, ফোন এবং ইন্টারনেট কেটে দেওয়ার পর, গাজায় কী ঘটছে তা জানার একমাত্র উপায় রেডিও। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে দাউদির দোকান। যুদ্ধের আগে, একটি রেডিওর দাম ছিল প্রায় ২৫ শেকেল (৭ ডলার)। বর্তমানে দাম বেড়ে ৬০ শেকেল (১৬ ডলার) হয়েছে। আরেক রেডিও দোকানের মালিক হুসেইন আবু হাসেম বলেছেন, মানুষ খবর শুনতে চায়। কোথায় গোলাগুলি হচ্ছে তা জানতে ও তাদের পরিবার সম্পর্কে জানতে চায়। এজন্য মানুষ রেডিও কিনছে। হাসেমের দোকানের সব রেডিও বিক্রি হয়ে গেছে। তবে নতুন স্টক অর্ডার করা অসম্ভব। বিবিসি আরবি এবং আল জাজিরার মতো স্টেশনগুলো বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের খবর জানাতে বিশেষ চ্যানেল চালু করেছে।

মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি টেলিযোগাযোগ সংস্থা প্যাল্টেল জানিয়েছে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাজুড়ে আবার ইন্টারনেট এবং টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চতুর্থবার এ ধরনের ব্রেকডাউন ঘোষণা করেছে। গাজায় যেখানে বুলেট-বোমার আক্রমণ মানুষের যোগাযোগের পথকেও বিঘ্নিত করেছে, সেখানে প্রযুক্তির একটু ছোঁয়া বেঁচে থাকার বাতিঘর হয়ে উঠেছে। ইকার্ড। সাধারণ সিম কার্ডের ডিজিটাল সংস্করণ। এটি তীব্র সংঘাত এবং বিপর্যস্ত পরিকাঠামোর মধ্যেও নিজেদের ও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখার জন্য বাসিন্দাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ইকার্ডগুলো ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং টেলিকম ব্রেকডাউন সত্ত্বেও ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং যোগাযোগের চ্যানেলগুলো বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে বিদেশে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও খুব সহজেই যোগাযোগ করা যায়। এটি সবার কাছেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সাংবাদিকদের জন্য। যারা স্থল পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট করার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের জন্য, যারা তাদের পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার জন্য ইকার্ডের ওপর নির্ভর করছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *