অবরোধে ব্যস্ত বিএনপি, নির্বাচনে মগ্ন আওয়ামী লীগ
কোনোভাবেই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি নন তারা। তবে আওয়ামী লীগে শোনা যাচ্ছে প্রয়োজনে বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা।
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কোনোভাবেই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। অবরোধ শেষে সামনের সপ্তাহে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে গেলে আন্দোলন কীভাবে পরিচালিত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব দেশের বাইরে আছেন। তিনিই মূলত আন্দোলনের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের যোগাযোগ আছে। তার একটি নেটওয়ার্ক আছে। আর আমাদের এখানে কয়জন নেতাকে গ্রেপ্তার করবে? কোন পর্যায়ে কখন কার কী কাজ হবে তা ঠিক করা আছে।’
তার কথা, ‘এখন আমাদের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই। আমরা আন্দোলনের বিকল্প আর কিছু ভাবছি না। আর পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো চাপের মুখে পড়বে বলে আমরা মনে করি।’
‘আমরা এখন যতদূর সম্ভব গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রতি নির্দেশনাও তেমন। আমরা গ্রেপ্তার হয়ে গেলে আন্দোলন থামবে না,’ বলেন এই বিএনপি নেতা।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হবিবুল আউয়াল মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির কথাই জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানও একই কথা বলছেন। নির্বাচন কমিশনের কথা, কে নির্বাচনে এলো আর কে এলো না সেটা তাদের দেখার বিষয় নয়।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, ‘দেশে বিএনপির আন্দোলনে মানুষ সাড়া দেয়নি। হরতাল অবরোধ হচ্ছে না। বিএনপি এখন পালাচ্ছে। বিএনপি নিজেদের সন্ত্রাসের আগুনে নিজেরাই পুড়ছে। বিএনপির মতো একটি সন্ত্রাসী দল নির্বাচনে না এলে কিছু এসে যায় না। যারা গণতান্ত্রিক দল, তারা নির্বাচনে আসবে। নির্বাচন হবে।’
সরকার বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করতে চায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপির জন্য নির্বাচনের ট্রেন অপেক্ষা করবে নাকি? তাদের জন্য কি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেমে থাকবে? রাষ্ট্র কি অচল হয়ে যাবে? তা হবে না। তাদের জন্য দেশ থেমে থাকবে না। নির্বাচন থেমে থাকবে না।’
তার কথা, ‘আমরা নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আমাদের প্রার্থীসহ সব কিছুই চূড়ান্ত আছে। এখন হুইসেল বাজলেই আমরা নির্বাচনে নেমে পড়বো।’
সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না।’
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার রাজনৈতিক সংলাপ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যারা আসবে, তাদের সঙ্গেই আমরা কথা বলবো। কিন্তু তাদের কোনো শর্ত ছাড়া আসতে হবে। সংবিধানের কাঠামো মেনে কথা বলতে হবে। সংবিধানের বাইরে যদি কেউ কিছু বলে, তাহলে সেটি হবে না।’
অবরোধের দ্বিতীয় দিন
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সিলেটে ছাত্রদল ও জামায়াতের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পথচারীসহ অন্তত সাতজন আহত হন। পুলিশ ছাত্রদল ও বিএনপির ছয় নেতা-কর্মীকে আটক করেছে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিএনপি-জামায়াত অবরোধের পক্ষে ছোট ছোট ঝটিকা মিছিল করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বুধবার বিকেলে অজ্ঞাত স্থান থেকে এক জুম বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো, তিনি নানা ধরনের ফন্দি করে আবারও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান। তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠনির্বাচনে বিশ্বাসী নন।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও বেশি বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডবে লিপ্ত হয়েছে। তারা মরণঘাতী অভিযানে আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠেছে। ২৮, ২৯ ও ৩১শে অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যার প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন বলেছে যে, মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক।’
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন হারুন উর রশীদ স্বপন। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের।