অসামান্য সাফল্য নিয়ে ইতালি থেকে মায়েশিয়া যাচ্ছেন শামীম আহসান


শামীম আহসান

মাঈনুল ইসলাম নাসিমঃ

ইতালিতে গত প্রায় আড়াই বছর সুনাম এবং সাফল্যের সাথে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মেধাবী কূটনীতিক মো. শামীম আহসান। মহামারি কোভিডের সময় ২০২০ সালে বাংলাদেশের তরফে কূটনৈতিক উদাসীনতা এবং অদূরদর্শিতার খেসারতে ইতালির ভয়াবহ দুঃসময়ে বাংলাদেশ পাশে না থাকায় দুই দেশের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কে যে ভাটা পড়েছিলো, তা অনেকাংশেই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন রাষ্ট্রদূত শামীম। রোমে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে সিরিজ বৈঠকের পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন বিভাগীয় প্রশাসনের সর্বস্তরে তিনি কাজ করেছেন সশরীরে। ড. মারিও দ্রাঘির পর জর্জা মেলোনির সরকারের নীতিনির্ধারকদের সাথে শামীম আহসান এবং তাঁর টিমের কার্যক্রমের সুফল হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে বৈধ অভিবাসনের পথ প্রশস্ত হয়েছে। ইতালির সাথে বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাণিজ্যের সুসম্পর্ক ক্রমাগত জোরদারে রাষ্ট্রদূত শামীমের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে ইতালির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে।

ইতালির মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশে কূটনীতিক হিসেবে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার মো. শামীম আহসানকে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আরও গুরুত্বপূর্ণ দেশ মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সহসাই, ঢাকার গণমাধ্যম তেমনটাই জানিয়েছে৷ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টি আমি অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছি কারণ ১০ লাখ বাংলাদেশি অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজারে চলমান সংকট নিরসনে নতুন হাইকমিশনার সুযোগ পাবেন তাঁর মেধা, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে। মালয়েশিয়াতে হাইকমিশনার হতে পারা তাঁর জন্য এচিভমেন্ট। ইতালির মতো মালয়েশিয়াতেও সফল হবেন তিনি, এই প্রত্যাশা আমাদের। তবে রোমে বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান, যার জন্য সমূলে দায়ী বাংলাদেশ ভিত্তিক অবৈধ রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের রমরমা ব্যবসা।

ইতালির রাষ্ট্রীয় আইনে এদেশের ভৌগলিক সীমারেখার অভ্যন্তরে ভিনদেশি যে কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তথাপি বছরের পর বছর ধরে থেমে নেই ইতালিতে বাংলাদেশি বস্তাপঁচা রাজনীতি, যা সবসময় হার মানায় গ্রাম্য রাজনীতিকেও। বিএনপি বহু বছর ধরে দূতাবাসের কার্যক্রম বয়কট করে আসছে। আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই গ্রুপ দূতাবাসে তাদের নিজস্ব আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করেছে সাপে-নেউলে। সরকারি চাকরি করা রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গত কারণেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বারে বারে। অতি সম্প্রতি দূতাবাস চত্ত্বরে রক্তাক্ত সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ, যাদেরকে এক করার দায়িত্ব নিশ্চয়ই রাষ্ট্রদূতের নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং যাদেরকে এক করতে পারেননি, রাষ্ট্রদূতের কাছে সেটা আশা করার সুযোগ নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করার চাইতে ভিলেজ পলিটিক্স যাদের সম্বল, তারা ঐক্যবদ্ধ হবে না এটাই অপ্রিয় বাস্তবতা।

রোমে রাষ্ট্রদূত হিসেবে আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মো. শামীম আহসান বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন কিন্ডার ইস্যুতে। বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া হয়ে অবৈধ রুটে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে যে হাজার হাজার বাংলাদেশি ভূমধ্যসাগরে গেইম দিয়ে বিগত বছরগুলোতে ইতালিতে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের একটা বড় অংশ পথে নিজ নিজ পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে আসল বয়স লুকিয়ে নিজেদেরকে অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবি করে ইতালীয় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে কিন্ডার (বাম্বিনো) কেইস ঠুকে দেয়। প্রশাসনের কমপিউটারে যখন তাদের বয়স আঠারো হয় তখন সেটার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তারা দূতাবাসে আবেদন করে নতুন পাসপোর্ট। বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা অনুসারে তাদের অধিকাংশের কাছে আগে থেকে ইস্যুকৃত জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) না থাকায় বয়স কমিয়ে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করেনি দূতাবাস। কিন্ডার কেলেংকারিতে ইতোমধ্যে রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। যৌক্তিক কারণে নড়েচড়ে বসে ইতালীয় প্রশাসন।

রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান মালয়েশিয়ায় বদলি হচ্ছেন বা হতে পারেন এমন সংবাদে রোমের সুযোগসন্ধানী কুচক্রী দেশি রাজনৈতিক মহলে উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের কামড়াকামড়ির কারণে রাষ্ট্রদূত শামীমকে ঢাকায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে এমন ফেইক নিউজ ভাইরাল করেছে অতি উৎসাহী মহল। ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে রোমে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যাকে পাঠানো হোক না কেন, ভিলেজ পলিটিশিয়ানদের সামাল দিতে গিয়ে তিনি কঠোর হবেন নাকি নতুন করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বেন সেটা সময়ই বলে দেবে। বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে দূতাবাসে কোন প্রবাসীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না এমন সিদ্ধান্ত অত্যাবশ্যক। দূতাবাসকে ঘিরে বাংলাদেশ ভিত্তিক অবৈধ রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না হলে ইতালির মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হতেই থাকবে, যার প্রভাব পড়বে ইতালির সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে।

মাঈনুল ইসলাম নাসিম, প্রবাসী সাংবাদিক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *