“২০২৫-এর সংঘাতের গ্লোবাল ডমিনোঃ মোদীর রাজনীতি, মুদ্রাযুদ্ধ ও পারমাণবিক ঝুঁকি

এম, এ হক
বিশ্লেষকদের চোখে ভারত-পাকিস্তান টানাপোড়েনের বহুমাত্রিক প্রভাব—
সামরিক সংঘাতের তাৎক্ষণিক পরিণতি হলো রক্তক্ষয় থেকে আঞ্চলিক অস্থিরতা।
২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সংঘাতের মূল ট্রিগার ছিল ২২ এপ্রিল পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হন। এরপর ভারত “অপারেশন সিঁদুর” নামে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল জইশ-ই-মুহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈয়বার ঘাঁটি ধ্বংস করা । পাকিস্তান পাল্টা হামলায় ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবী করেছে এবং জম্মু-কাশ্মীরে বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ চালিয়েছে ।
– মানবিক ক্ষয়ক্ষতিঃ ভারতের দাবী অনুযায়ী ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত; পাকিস্তানের দাবী, ৩১ জন বেসামরিক নিহত ।
– অর্থনৈতিক ধ্বসঃ ভারতের স্টক মার্কেট ৩০% ধ্বসেছে, রুপির মান ঐতিহাসিক নিম্নে।
– আঞ্চলিক উত্তেজনাঃ বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার।
এটা কি মোদীর নতুন কোনো রাজনৈতিক কৌশল? জাতীয়তাবাদী জোয়ার নাকি অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলা?
২০২৪ সালের নির্বাচনে ৪০০+ আসনে জয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী এই সংঘাতকে “জাতীয় নিরাপত্তা” ও “সন্ত্রাসবিরোধী সংকল্প”-এর ন্যারেটিভ হিসেবে ব্যবহার করছেন । বিশ্লেষকদের মতে, এটি অভ্যন্তরীণ চাপ (৮% বেকারত্ব, কৃষক বিক্ষোভ) থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর কৌশল । সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং এবং এনআরআইদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা এই কৌশলের অংশ ।
বৈশ্বিক শক্তির খেলাঃ ষড়যন্ত্র নাকি স্বার্থের সংঘাত?
এই সংঘাতকে “বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র” বলা না গেলেও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর ভূমিকা স্পষ্ট।
– যুক্তরাষ্ট্র-ভারত জোটঃ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে, তবে CAATSA (Countering America’s Adversaries Through Sanctions Act) স্যাংশনের হুমকি সত্ত্বেও চীন-পাকিস্তান অক্ষ মোকাবেলায় নীরব ।
– চীন-পাকিস্তান অক্ষঃ পাকিস্তানের ৮০% অস্ত্র চীনা সরবরাহ, সিন্ধু নদের উৎসে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পরোক্ষ চাপ ।
– রুপি-রুবল চুক্তিঃ ভারত-রাশিয়ার ৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে ডলার বাদ দেওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলোর অস্বস্তি । ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের মতে, “মুদ্রাযুদ্ধ এখন সামরিক ফ্রন্টের অংশ”।
বিশ্লেষকদের মূল্যায়নঃ পারমাণবিক ঝুঁকি থেকে অর্থনৈতিক মন্দা।
– পারমাণবিক হুমকিঃ SIPRI (Stockholm International Peace Research Institute) সতর্ক করেছে, পাকিস্তানের ১৭০+ ওয়ারহেড যেকোনো সংঘাতকে “অনিয়ন্ত্রিত” করতে পারে ।
– অর্থনৈতিক প্রভাবঃ ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪.৫%-এ নেমে আসার শঙ্কা।
– বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলঃ এয়ারলাইন্সের রুট পরিবর্তন, জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ।
এখন পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজমান। ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত। পাকিস্তানের দাবী, ১২টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত। এদিকে
বাংলাদেশের যশোর ও রাজশাহী সীমান্তে প্রস্তুতি হিসেবে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
২০২৫-এর এই সংঘাত শুধু দুই দেশের যুদ্ধ নয়, বরং বহুপাক্ষিক শক্তির সমীকরণ, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিল সমন্বয়। মোদীর জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা সাময়িক জনসমর্থন জোগালেও পারমাণবিক ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ধ্বস ভারতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী হুমকি । রুপি-রুবল চুক্তি ডলারের একচেটিয়াত্ব ভাঙার প্রথম পদক্ষেপ, যা পশ্চিমা শক্তিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এই সংঘাতের গতি প্রকৃতির নীতি নির্ধারক হলেও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি নির্ভর করছে নেতৃত্বের সংযম ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞার উপর।