জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

তা‌রিক মে‌হের

সচিবালয়ে আগুন লাগাটা অবাক করবার মতন কোন বিষয় নয়। যখন আমরা দেখি দু প্রান্তের দুটি ভিন্ন কক্ষে আগুন জ্বলছে আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে আগুন নিজে নিজে লাগেনি আগুন কেউ পরিকল্পিতভাবে লাগিয়েছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল আলয়ে এই আগুন জ্বলে উঠলেও অবাক হবার মতন কিছু থাকবে না।

৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থান হল। পালিয়ে দেবার সুযোগ দেয়া হল শেখ হাসিনাকে। শুধু তাই নয় জামাই আদরে সুরক্ষিত করা হলো ছয় সাতশো বিগ শটকে। অথচ যুদ্ধের কৌশল হলো প্রতিপক্ষ ও পরাজিতকে বন্দী বা জিম্মি করে রাখা। আমি নিশ্চিত শুধু মাত্র শেখ হাসিনা বন্দী থাকলেই বাংলাদেশে কোথাও কোন আগুন জ্বলতো না।

১৬ বছরে সরকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে শতকরা নব্বই ভাগ ঢুকেছে আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকজন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই ব্যক্তিগুলো বর্তমান সরকারকে সহযোগীতা করবে না। সহযোগিতার বিপরীতে আগুন লাগিয়ে দেয়াটাই বরং স্বাভাবিক।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রশাসন সাজানোর ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি জামায়াতে ইসলামের লোকজন এবং তরুণ উপদেষ্টা মহোদয়দের পছন্দসই ব্যক্তিদের পদায়নের প্রবনতা; যেটি অনভিপ্রেত এবং অপরিনামদর্শীতা। স্বাস্থ্য সেক্টরে বেশ কয়েকজনকে পদায়ন করা হয়েছে যারা জামায়াতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট হলেও বিগত ষোল বছর বিভিন্ন ভাবে স্বাচিপ পন্থীদের ছত্রছায়ায় বিবিধ সুবিধা নিয়েছে। সুবিধা নিতেই পারেন মানুষ জন্মগত ভাবে স্বার্থান্বেষী ও সুবিধা প্রবণ।

কিন্তু ভোটার সংখ্যা ও জনভিত্তি বিবেচনা করলে এবং স্বৈরাচার বিরোধী ভূমিকাকে আমলে নিলে যদি আওয়ামী মুক্ত সরকার ব্যবস্থা বিবেচনায় আনা যায় তবে বিভিন্ন প্রশাসনের অন্তত সত্তরভাগ পদ বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তা দ্বারা পূরণ করাটা ন্যায্যতা পেতে পারে।

আপনি দশভাগ লোক দিয়ে শূন্য স্থান পূরণ করতে চাইলে সচিবালয়ে আগুন লাগবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়।সাবেক ভারতীয় হাই কমিশনার বীনা সিক্রি বলেছেন যে, জামায়াত ইসলামকে ক্ষমতায়িত করা হচ্ছে। জামায়াত ক্ষমতায়িত হোক সেটা সমস্যা নয় কিন্তু কারো আকাঙ্খা তার ন্যায্যতাকে অতিক্রম করে গেলে সংকট তৈরী করে। সেই সংকটে কোথাও আগুন লাগলে সে আগুন লাগার দায় পারতপক্ষে সরকারের ঘাড়েই বর্তায়।

এখনো সময় আছে সংস্কারের বুলি ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের দিকে ধাবিত হবার। নইলে দুর্বল সরকার ব্যবস্থা আগুনের বিস্তার ঠেকাতে পারবে না বলেই অনুমান করা যায়। আপনারা তত্ত্বাবধায়ক ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে তাদের সাহায্য করুন দেশ গড়বার কাজে।কিন্তু সেটির বিপরীতে আপনারা সংস্কারের নামে রাজনৈতিক দলকে প্রতিপালন করে কিংস পার্টির জন্ম দেবেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সেটি কিন্তু এক ধরনের বৈষম্য তৈরী করে। বৈষম্য বিরোধীদের লালন পালনের নামে বৈষম্য তৈরী করাটাও কিন্তু গনতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ বলেই বিবেচিত হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের দু’একজন ছাড়া পোটেনশিয়াল পিপল এবং কমান্ডিং মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যদিও এদের প্রোফাইল অনেক উঁচু। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সরকার এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিলো কিন্তু তারাও ব্যর্থ হয়েছে। মঈনউদ্দীন ফখরুদ্দিন যে পালিয়ে গেল আর খোঁজ নাই। সমস্যা হলো পালিয়ে যাওয়ার আগে ভারত আর শেখ হাসিনার কাছে দেশটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে গেছে। সেই আগুন এখন সচিবালয় পোড়াচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *