মহানায়কের অন্তিম প্রস্থান
এম,এ হক
বুলবুল আহমেদ (৪ঠা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ – ১৪ই জুলাই ২০১০) ছিলেন একজন চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেতা। পুরো নাম তবাররুক আহমেদ বুলবুল, বুলবুল আহমেদ নামেই অধিক পরিচিত। ১৯৪১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগা মসি লেনে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন একজন শৌখিন অভিনেতা। সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি চিরকুমার সভা নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। ১৯৬০ সালে তিনি ‘ড্রামা সার্কেল’ নামে নাট্য দলে যোগদান করেন এবং ইডিপাস ও আর্মস এ্যান্ড দি ম্যান নাটক দু’টিতে অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে টেলিভিশনে ‘পূর্বাভাস’ নাটকের মাধ্যমে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়। সে সময়েই অভিনেতা হিসেবে তিনি বুলবুল আহমেদ নাম গ্রহণ করেন।
আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম পরিচালিত ‘ইয়ে করে বিয়ে’ (১৯৭২) ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয়। ছবিতে তিনি একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পরের বছরই তিনি ‘জীবন নিয়ে জুয়া’ ছবিতে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।
অভিনয়ে দক্ষতা এবং দৃষ্টিনন্দন অভিব্যক্তির জন্য তিনি বেশ পরিচিত। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। মঞ্চ এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ছবি পরিচালনাও করেছেন, তন্মধ্যে ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ এবং ‘আকর্ষণ’ উল্লেখযোগ্য। ছবি দু’টি ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। তাছাড়া তিনি ওয়াদা, ভালো মানুষ, মহানায়ক, গরম হাওয়া, কত যে আপন ছবিতে অভিনয় করেন এবং পরিচালনাও করেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যেঃ সীমানা পেরিয়ে, মহানায়ক, দীপু নম্বর টু, মোহনা, ভালো মানুষ, শেষ উত্তর, হারানো মানিক, সোনার হরিণ, সূর্য্য কন্যা, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায় উল্লেখযোগ্য। শেষ বিকালের মেয়ে, বরফ গলা নদী, আরেক ফাল্গুন, ইডিয়ট, মালঞ্চ, বড়দিদি, শুভা ও এইসব দিনরাত্রি তাঁর জনপ্রিয় নাটক।
বুলবুল আহমেদ তাঁর অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি চারটিঃ আলমগীর কবীর পরিচালিত সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), কাজী জহির পরিচালিত বধূ বিদায় (১৯৭৮), আজিজুর রহমান বুলি পরিচালিত শেষ উত্তর (১৯৮০) এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দীপু নম্বর টু (১৯৯৬)। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত ছবিটির শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবেও বুলবুল আহমেদ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
আজ এই মহান অভিনেতার মৃত্যু বার্ষিকী। আল্লাহ্ পাক যেন বুলবুল আহমদের ভুলক্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন।