বাঙ্গালী বডি বিল্ডার

এম, এ হক
বডি বিল্ডিং এর ইতিহাসে একজন বাঙালি বডি বিল্ডার “মনোহর আইচ” যিনি “মিস্টার ইউনিভার্স” খেতাব পেয়েছিলেন।
তিনি ১৯১২ সালের ১৭ মার্চ অবিভক্ত বাংলায় কুমিল্লা জেলার “ধামতী” গ্রামে জন্মেছিলেন। ১৯৫২ সালে আয়োজিত মিস্টার ইউনিভার্স গ্রুপ-৩ বিভাগে বিজয়ী হয়েছিলেন। মাত্র ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতা হওয়ার কারণে তাঁকে “পকেট হারকিউলিস” বলা হতো।
দিনে চার বেলা পান্তা ভাত আর বারো ঘণ্টা অনুশীলনই তাঁকে এনে দিয়েছিলো বিশ্বশ্রী খেতাব।
পান্তা ভাতের জল
তিন পুরুষের বল’- এ কথা তিনিই বলতেন। তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, একসময় দিনে চার বেলা পান্তা খেতেন। কিন্তু বডি বিল্ডিং চালিয়ে নেয়া সহজ ছিল না।
১২ বছর বয়সে আক্রান্ত হন কালাজ্বরে। ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে শুরু করলেন দেশীয় স্টাইলে শরীর চর্চা। পড়ালেখা করতেন ঢাকার কে এল জুবিলি স্কুলে। একবার সে স্কুলে জাদু দেখাতে আসেন বিখ্যাত জাদুশিল্পী পি সি সরকার। মনোহর আইচের শরীর চর্চা দেখে তিনি নিজের দলে নিয়ে নেন তাঁকে।
মনোহর পি সি সরকারের সাথে বিভিন্ন প্রোগ্রামে দেখাতে শুরু করেন:
দাঁত দিয়ে ইস্পাত বাঁকানো,
গলার সাহায্যে বল্লম আনমিত করা,
তরবারির উপর পেট রেখে শুয়ে থাকা,
দেড় হাজার পাতার বই নিমিষে ছিঁড়ে ফেলা…..!
একসময় ভারতের ব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্সে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। এয়ার ফোর্সের অফিসার রিউব মার্টিন মনোহরকে আধুনিক শরীরচর্চা পদ্ধতির সাথে পরিচিত করান। মনোহর ওয়েট ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে নিজের দেহকে এমনভাবে নির্মাণ করেন যে রয়াল ফোর্সের অন্য সবাই তাঁকে প্রশংসা করতেন।
একদিন এক অফিসার তাঁর দেশ সম্পর্কে তাচ্ছিল্যপূর্ণ মন্তব্য করায় মনোহর রাগে কষে এক চড় বসিয়ে দেন। মনোহরকে জেলে ঢোকানো হয়। জে*লে যাওয়ার পরেই তিনি বডি বিল্ডিং নিয়ে ভালো করে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করেন। তাঁর মনে হতে থাকে তিনি চাইলে বিশ্ব বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় যেতে পারেন। এর জন্য প্রস্তুতি নিতে জেলে একা একা, কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি ছাড়াই ব্যায়াম করে যেতেন। কখনো কখনো দিনে ১২ ঘণ্টা করে।
একসময় তার বুকের ছাতি হয় ৫৪ ইঞ্চি আর কোমর ২৩ ইঞ্চি, অর্থাৎ পারফেক্ট একটি ভি আকৃতি বলতে যা বোঝায়। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মনোহর আইচ জে*ল থেকে ছাড়া পান অন্য সবার সাথে।
১৯৫০ সালে তিনি মিস্টার হারকিউলিস খেতাব জিতেন। ১৯৫২ সালে জিতেন মিস্টার ইউনিভার্স খেতাব। এরপর আসে আরো অনেক খেতাব, এর মধ্যে আছে এশিয়ার সেরা বডি বিল্ডারের খেতাবও। তার উচ্চতা ছিল মাত্র ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি – এজন্য তাঁকে ডাকা হতো
“পকেট হারকিউলিস”!
বলিউডের নায়কদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন রোল মডেল। ৯০ বছর বয়সে শেষবারের মতো তিনি বডি বিল্ডিংয়ের মঞ্চে ওঠেন। সুস্থতার এক নজির গড়ে সেঞ্চুরি পার করে সবার কাছেই হয়ে উঠেছিলেন বিস্ময়।
৯৫ বছর বয়সেও ওজন তুলেছেন হেলায়। ১০০ বছর বয়সে প্রাতঃভ্রমণ ছিল নিত্য অভ্যাস।
বডি বিল্ডিংয়ের এই কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব মারা যান ২০১৬ সালের ৫ জুন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর।
উচ্চতা ছিল মাত্র ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। কিন্তু মনোহরের ব্যক্তিত্বের সামনে অনেক লম্বা মানুষকেও ‘খাটো’ মনে হত!