বাংলাদেশে বর্তমান শাসনব্যবস্থার সংকট

এম, এ হক
বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থাকে বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি মূল ইস্যু চিহ্নিত করা যায়। সরকারী স্তরে দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০২২ সালের সূচকে বাংলাদেশ ১৪৭তম স্থানে রয়েছে।
সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অপব্যবহার, এবং সরকারবিরোধী কণ্ঠস্বর চেপে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান ও নারী-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে হামলা। উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে নারী শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে “অপসংস্কৃতি” আখ্যা দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে ঢাকায় একটি নাট্য মঞ্চনায় হামলা এবং নারী অধিকারকর্মীদের অনলাইন হয়রানি। ২০২৫-এর পহেলা বৈশাখের আগেও মঞ্চ নাটক প্রচারের ব্যাপারে হুমকি।
কিছু গোষ্ঠী ধর্মীয় নেতাদের ফতোয়ার মাধ্যমে স্বাধীনচেতা ব্লগার বা শিক্ষাবিদদের টার্গেট করছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তা।
নিরাপত্তা বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট বলে অভিযুক্ত সরকারের নীতিনির্ধারকরা উগ্রবাদ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার নামে উগ্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে নীরব সমঝোতা থাকতে পারে।
সামাজিক মিডিয়ার দ্বৈত ভূমিকাও লক্ষণীয়। কিছু অনলাইন এক্টিভিস্ট ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সংকটগুলো এড়িয়ে গিয়ে সরকারী পক্ষের তথ্য প্রচার করছেন, যা “অনৈতিক সুবিধা” অর্জনের ইঙ্গিত দেয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। নির্বাচনী সহিংসতা ও বিরোধী দলের দমনকে “স্বৈরাচারের দিকে অগ্রসরমান” বলে উল্লেখ করেছেন ডেমোক্রেসি ওয়াচের গবেষকরা। কেউ কেউ মনে করেন, উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সমাজে ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইএমএফ-এর মতে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য নীতিগত শর্ত জোরদার করতে পারে। সিভিল সোসাইটির জোরালো ভূমিকা এই মূহুর্তে অপরিহার্য। নারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং গণসচেতনতা তৈরী জরুরী। মডারেট ইসলামিক স্কলারদের মাধ্যমে উগ্রবাদ মোকাবিলায় জাতীয় পর্যায়ের ক্যাম্পেইন করা উচিৎ। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংকটময় পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় উগ্রতা, রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবীর মধ্যে টানাপোড়ন চলছে। রাষ্ট্রবিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের স্বচ্ছতা, নাগরিক সমাজের ঐক্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। নইলে হাদিসে বর্ণিত সেই “অন্ধকার সময়”-এর দিকে দেশটি আরও এগিয়ে যেতে পারে।