বাংলা‌দে‌শের সিজনাল মুসলিম


এম,এ হক

বাংলাদেশে সিজনাল মুসলিমদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এরা রমজান মাসে হঠাৎ করেই ধর্মপরায়ণ হয়ে ওঠেন। রোজা রাখা, তারাবির নামাজ পড়া, মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবের ওয়াজ শোনা—এগুলো যেন তাদের বছরের বাকী এগারো মাসের জন্য জমা থাকে। ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখা হয়, “আল্লাহ, এই রমজান যেন আমার জীবনের শেষ রমজান না হয়।” কিন্তু রমজান শেষ হওয়ার পরের দিনই আবার সেই পুরনো রুটিন: ফ্রেন্ডসের সাথে আড্ডা, রাত জেগে সিরিয়াল দেখা।

একবার এক সিজনাল মুসলিম রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়তে গিয়ে দেখলেন, তার পাশে দাঁড়ানো লোকটা খুবই ধর্মপরায়ণ। লোকটা নামাজ শেষে তাকে বলল, “ভাই, আপনি তো খুব ভালো নামাজ পড়েন। রমজান ছাড়াও কি নিয়মিত নামাজ পড়েন?” সিজনাল মুসলিম ভাই একটু হেসে বললেন, “না ভাই, আমি তো শুধু রমজানেই নামাজ পড়ি। বাকি সময় তো আল্লাহ আমাকে ছুটি দেন!”

ফেইসবু‌কে একটা ভি‌ডিও দেখলাম, এক ম‌হিলা‌কে মাথায় কাপড় না দেওয়ার অপরা‌ধে বাস কন্ডাকটর অত‌্যন্ত রূঢ়ভা‌বে তা‌কে হেনস্থা করল।

বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। একবার একলোক ওয়াজ করতে গিয়ে বললেন, “আমরা যদি সবাই মিলে ইসলাম কায়েম না করি, তাহলে আমাদের দেশে শান্তি আসবে না।” একজন শ্রোতা হেসে বলল, “ভাই, আপনি তো শান্তির কথা বলছেন, কিন্তু আপনার ওয়াজ শুনে আমার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেছে।” তি‌নি একটু চিন্তা করে বললেন, “ভাই, এটা তো শয়তানের কুমন্ত্রণা। আপনি একটু ধৈর্য ধরুন, সব ঠিক হয়ে যাবে।”

বাংলাদেশে কিছু মানুষ আছেন যারা রাস্তা বন্ধ করে ওয়াজ করেন। আশেপাশের মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা তাদের মাথায় থাকে না। একবার একজন রাস্তা বন্ধ করে ওয়াজ করছিলেন। একজন পথচারী তাকে বলল, “ভাই, আপনি তো ওয়াজ করছেন, কিন্তু আমাদের তো অফিসে যেতে হবে। একটু পথ ছেড়ে দিন না।” ওয়াজকারী বললেন, “ভাই, আপনি তো অফিসে যাবেন, কিন্তু আমি তো এখানে আল্লাহর কথা বলছি।” পথচারী হেসে বলল, “ভাই, আল্লাহ তো সব জায়গায় আছেন। আপনি একটু সরেন, আমরা যাই।”

বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েও অনেক কৌতুক শোনা যায়। একবার এক নেতা জনসভায় বললেন, “আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তাহলে দেশের সব সমস্যার সমাধান করব।” একজন শ্রোতা হেসে বলল, “স্যার, আপনি তো আগেও ক্ষমতায় ছিলেন। তখন তো কিছুই করেন নাই।” নেতা একটু চিন্তা করে বললেন, “ভাই, তখন তো আমরা শিখছিলাম। এবার আমরা পুরোদস্তুর কাজ করব।”

বাংলাদেশে হজ পালন করে আসা মানুষদের কিছু অভ্যাস যেমন “হাজী” টাইটেলের সঙ্গে অটোগ্রাফেড! তারা শুধু ধর্মীয় কর্তব্যই পালন করেন না, বরং সমাজে নিজেদের নতুন আইডেন্টিটি প্রমাণ করতে গিয়ে কখনো কখনো এমন মজার ঘটনা তৈরী করেন যে হাসি ঠেকানো যায় না।

হজ থেকে ফিরেই হাজী সাহেবের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার হয়ে যায় কাবা শরিফের সামনে সাদা ইহরামে তোলা ছবি। ক্যাপশন লেখেন: “আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছি, এখন আপনার পালা।”

হজ শেষ করে বাড়ী ফিরেই নামের আগে “আলহাজ” টাইটেল জুড়ে দেন অনেকে। এক ভাই ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে গিয়ে ফর্মে নাম লিখলেন: “আলহাজ মো. কামাল উদ্দিন”।
ক্লার্ক জিজ্ঞেস করল: “স্যার, আগে তো শুধু ‘মো. কামাল’ ছিল?”
হাজী সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন: “এখন আর আগের কামাল নই—হাজী কামাল।”
ক্লার্ক মজা নিয়ে বলল: “ঠিক আছে, তবে ইন্টারেস্ট রেট আগের মতোই থাকবে, ‘হাজী’ বোনাস পাবেন না।”

এক হাজী সাহেবের দোকানে সাইনবোর্ড লাগানো: “হাজী ভাইয়ের দোকান—এখানে সব জিনিস হালাল, নিশ্চিন্তে কিনুন!”
এক ক্রেতা জিজ্ঞেস করল: “ভাই, আগে তো আপনার দোকানে নকল পারফিউম বিক্রি করতেন?”
দোকানদার হেসে বললেন: “সে তো হজ করার আগের কথা! এখন সব হালাল!”

হাজী সাহেবদের এই “জাহির করার” প্রবণতা নিয়ে কৌতুক করলেও, আসলে হজ একটি মহান ইবাদত। সমস্যা তখনই, যখন ইবাদতের চেয়ে টাইটেলটা বড় হয়ে যায়।

এই সব কৌতু‌কের মাধ্যমে আমাদের সমাজের কিছু অসঙ্গতিকে হালকাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি, আপনাদের ভালো লেগেছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *