আসিফ নজরুল : একজন আধুনিক মীর জাফর
এম,এ হক
আসিফ নজরুল সম্পর্কে কিছু তথ্য ও তথাকথিত জাতির বিবেক আসিফ নজরুল।
বাংলাদেশের ইতিহাস জীবনের মতই চলমান। যারা ইতিহাসবিদ তারা অনেক নদীর এক মোহনায় গিয়ে মেশা দেখতে পান।
আজকে একজনের পোষ্ট পড়ছিলাম, সে নাকি শিক্ষক হতে চাইলে আসিফ নজরুলের মত হতে চায়।
আসিফ নজরুলের প্রকৃত নাম মোঃ নজরুল ইসলাম। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ল ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করে কিছুদিন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেন, এরপর যোগ দেন ‘বিচিত্রা’য়। ৯০’ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় নজরুল ছাত্রদলে ছিলেন।
বিশেষ করে তৎকালীন ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক অভির সাথে ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। অভির চরিত্রকে নির্ভর করে নজরুল তার প্রথম উপন্যাস ‘ক্যাম্পাসের যুবক’ লিখেন।
বিচিত্রায় শাহরিয়ার কবিরের সাথে তরুণ নজরুলের কলিগ হিসেবে দেখা। নজরুল সাংবাদিক হওয়ার উচ্চাশায় শাহরিয়ার কবিরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার নিমিত্তে যোগ দেয় ঘাতক দালাল নির্মূল (ঘাদানি) কমিটিতে।
বয়সে তরুণ, তার উপর আইনজীবী এ বিবেচনায় শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নজরুলকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাকে সারাদেশ থেকে আসা মাঠ পর্যায়ের রাজাকারদের যে তথ্য তা সমন্বয় করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কাজ দেয়া হয়।
১৯৯২ সালে রমনায় ঘাদানি’র যে প্রতীকী আদালত বসে ২৬শে মার্চ নজরুল সেখানে গোলাম আযমের আইনজীবীর ভূমিকা পালন করেন।
আপনাদের মনে থাকবে শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিএনপি সরকার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে। সেখানে আসিফ নজরুলের নাম নজরুল ইসলাম হিসেবে নথিবদ্ধ আছে।
১৯৯৩ এর ১৬ ডিসেম্বর ঘাদানিক-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের নথি পেশ করার কথা ছিল যার মূল কাগজপত্রের সবই ছিল নজরুলের কাছে। কিন্তু নজরুলের সাথে ক্যান্সার আক্রান্ত শহীদ জননী বহুবার যোগাযোগ করলেও সে ধরা দেয় না ঐসমস্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের দলিল দস্তাবেজের মাঠ পর্যায়ের তথ্যসহ।
নজরুল ক্যান্সার আক্রান্ত শহীদ জননীকে একটি যেনতেন রিপোর্ট দিয়ে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ড চলে যায় ১৯৯৪ সালে।
কী আশ্চর্য লাগছে। শহীদ জননী যেখানে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন সেখানে একই মামলায় নজরুল কিভাবে দেশত্যাগ করল?
নজরুল ঘাদানিক-এর সবাইকে ডিঙিয়ে এ সময় ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন আইন বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান এরশাদুল বারীর সাথে। বারীর সুপারিশে নজরুল কমনওয়েলথ বৃত্তি লাভ করেন।
নজরুলের পুরো ভূমিকা, তার এই বেঈমানী লিপিবদ্ধ আছে শাহরিয়ার কবিরের লেখা ‘জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি’ বইয়ে । শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, নজরুলের এহেন ব্যবহারে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন শাহরিয়ার কবিরের হাত ধরে।
আমাদের স্বভাব হলো, যে আমার পক্ষে থাকবে, যে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সে চোর, ডাকাত, খুনি, ধর্ষক, প্রতারক, নিপীড়ক যাই হোক না কেন, তার কোনো কাজই আমাদের কাছে অন্যায় বলে পরিগনিত হবে না।
ব্যক্তিকে পীর, আউলিয়া, আইডল মানার আগে আমাদের এতটুকু বিচার-বিশ্লেষণ সক্রিয় থাকে না।
জাতীয় বেঈমান তো সবাই হতে পারে না, নজরুল ইসলাম ওরফে আসিফ নজরুল হতে পেরেছে। তার ইতিহাস হয়ত আরও অনেক শব্দে নিবদ্ধ করা যাবে কিন্তু দীর্ঘ লেখা কেউ পড়বে না।
ভিন্ন দলে থাকা, ভিন্ন মতে নিমগ্ন হওয়া, ভিন্ন রং ধারণ কোনটাই নিষিদ্ধ নয়; কিন্তু ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নথি গায়েব করে এরশাদুল বারীর রেকমেন্ডেশনে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলার আসামীর কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পলায়ন আধুনিক মীর জাফরের চেয়ে কোন অংশে কম না।
তাই বলি একজন আসিফ নজরুল হওয়া কোন স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন মানুষের লক্ষ্য হতে পারে কি না ভেবে দেখবেন।